জ্যামিতি:
জ্যা শব্দের অর্থ ভুমি এবং মিতি শব্দের অর্থ পরিমাপ। অতএব, জ্যামিতি শব্দের অর্থ ভুমির পরিমাপ।অন্যদিকে জ্যামিতি- এর প্রতিশব্দ ‘Geometry’ শব্দটি একটি গ্রীক শব্দ যা ‘Geo’ এবং ‘Metron’ -এর সমন্বয়ে গঠিত। ‘Geo’ অর্থ Earth বা ভুমি এবং ‘Metron’ অর্থ Measure বা পরিমাপ। মূলত কৃষিভিত্তিক প্রাচিন সভ্যতার যুগে ভুমির পরিমাপের প্রয়োজনীয়তা থেকেই জ্যামিতির সৃষ্টি হয়েছিল।
আধুনিক জ্যামিতির ভিত্তি হলো গ্রীক পন্ডিত ইউক্লিডের ‘Elements’ নামক গ্রন্থ। আনুমানিক খ্রিষ্ঠপূর্ব ৩০০ অব্দে ইউক্লিড জ্যামিতির বিক্ষিপ্ত সুত্রগুলো একত্রিত করে তাঁর ‘Elements’ নামক গ্রন্থে প্রকাশ করে। গ্রন্থটি ১৩ খন্ডে বিভক্ত।
তল:
তল দ্বিমাত্রিক। এর শুধু দৈর্ঘ ও প্রস্থ আছে, উচ্চতা নেই। একটি ইটের ছয়টি তল রয়েছে।
তল দুই প্রকার: সমতল ও বক্রতল।
রেখা:
দুটি তল একে অপরকে ছেদ করলে উৎপন্ন হয় রেখা। রেখা একমাত্রিক। অর্থাৎ এর শুধু দৈর্ঘ আছে, প্রস্থ ও উচ্চতা নেই।
বিন্দু:
দুটি রেখা একে অপরকে ছেদ করলে উৎপন্ন হয় বিন্দু। বিন্দুর মাত্রা শূন্য। অর্থাৎ, বিন্দুর দৈর্ঘ, প্রস্থ ও উচ্চতা নেই। আছে শুধু অবস্থান।
কোণ:
দুটি রশ্মি একই সমতলে মিলিত হলে এবং তাদের একটি সাধারণ বিন্দু থাকলে একটি কোণ উৎপন্ন হয়। এক্ষেত্রে রশ্মিগুলোকে বলা হয় কোণের বাহু এবং সাধারণ বিন্দুকে বলা হয় শীর্ষবিন্দু।
সরল কোণ:
পরস্পর বিপরীত দুটি রশ্মি তাদের সাধারণ প্রান্তবিন্দুতে যে কোণ উৎপন্ন করে তাকে সরল কোণ বলে। সরল কোণের পরিমাপ ১৮০ ডিগ্রী।
সন্নিহিত কোণ:
দুটি কোণের একটি সাধারণ বিন্দু ও একটি সাধারণ বাহু থাকলে এবং কোণ দুটি সাধারণ বাহুর বিপরীত পাশে অবস্থান করলে তাদেরকে একে অপরের সন্নিহিত কোণ বলে।
পুরক কোণ:
দুটি সন্নিহিত কোণের পরিমাপ ৯০ ডিগ্রী হলে তাদের কে একে অপরের পুরক কোণ বলে।
সম্পুরক কোণ:
দুটি সন্নিহিত কোণের পরিমাপ ১৮০ ডিগ্রী হলে তাদের কে একে অপরের সম্পুরক কোণ বলে।
সমকোণ:
যে কোণের পরিমাপ ৯০ ডিগ্রী তাকে এক সমকোণ বলে।
সুক্ষকোণ:
৯০ ডিগ্রী এর চেয়ে ছোট কোণকে সুক্ষকোণ বলে।
স্থুলকোণ:
৯০ ডিগ্রী এর চেয়ে বড় কিন্তু ১৮০ ডিগ্রী অপেক্ষা ছোট কোণ- কে স্থুল কোণ বলে।
প্রবৃদ্ধ কোণ:
১৮০ ডিগ্রী এর চেয়ে বড় কিন্তু ৩৬০ ডিগ্রী অপেক্ষা ছোট কোণকে প্রবৃদ্ধ কোণ বলে।
বিপ্রতীপ কোণ:
কোণের বাহুদ্বয়ের বীপরিত রশ্মিদ্বয় যে কোণ উৎপন্ন করে তাকে ঐ কোণের বিপ্রতীপ কোণ বলে।
বিপ্রতীপ কোণ:
কোণের বাহুদ্বয়ের বীপরিত রশ্মিদ্বয় যে কোণ উৎপন্ন করে তাকে ঐ কোণের বিপ্রতীপ কোণ বলে।
ত্রিভুজ:
তিনটি রেখাংশ দ্বারা আবদ্ধ চিত্রকে ত্রিভুজ বলে। রেখাংশগুলোকে ত্রিভুজের বাহু এবং দুটি বাহুর সাধারণ বিন্দুকে শীর্ষবিন্দু বলে। ত্রিভুজের তিনটি বাহু ও তিনটি কোণ রয়েছে।
বাহুভেদে ত্রিভুজ তিন প্রকার: সমবাহু ত্রিভুজ, সমদ্বিবাহু ত্রিভুজ, বিষমবাহু ত্রিভুজ
সমবাহু ত্রিভুজ:
যে ত্রিভুজের তিনটি বাহু- ই সমান তাকে সমবাহু ত্রিভুজ বলে।
সমদ্বিবাহু ত্রিভুজ:
যে ত্রিভুজের দুইটি বাহু সমান তাকে সমদ্বিবাহু বলে।
বিষমবাহু ত্রিভুজ:
যে ত্রিভুজের তিনটি বাহু- ই অসমান তাকে বিষমবাহু ত্রিভুজ বলে।
কোণভেদে ত্রিভুজ তিন প্রকার: সুক্ষকোণী ত্রিভুজ, সমকোণী ত্রিভুজ ও স্থুলকোণী ত্রিভুজ।
সুক্ষকোণী ত্রিভুজ:
যে ত্রিভুজের তিনটি কোণ-ই সুক্ষকোণ আর্থাৎ ৯০ ডিগ্রী এর চেয়ে ছোট তাকে সুক্ষকোণী ত্রিভুজ বলে।
সমকোণী ত্রিভুজ:
যে ত্রিভুজের যেকোন একটি কোণ এক সমকোণ বা ৯০ ডিগ্রী তাকে সমকোণী ত্রিভুজ বলে।
স্থুলকোণী ত্রিভুজ:
যে ত্রিভুজের যেকোন একটি কোণ স্থুল কোণ তাকে স্থুলকোণী ত্রিভুজ বলে।
ত্রিভুজের পরিসীমা:
ত্রিভুজের তিনটি বাহুর দৈর্ঘের সমষ্টিকে ত্রিভুজের পরিসীমা বলে।
ত্রিভুজ ক্ষেত্র:
ত্রিভুজের তিনটি বাহু দ্বারা আবদ্ধ ক্ষেত্রকে ত্রিভুজ ক্ষেত্র বলে।
মধ্যমা:
ত্রিভুজের কোন শীর্ষবিন্দু হতে বিপরীত বাহুর মধ্যবিন্দুর উপর অঙ্কিত রেখাংশকে মধ্যমা বলে।
ত্রিভুজের উচ্চতা:
কোন শীর্ষবিন্দু হতে বিপরীত বাহুর উপর অঙ্কিত লম্ব দুরত্বকে বলা হয় ত্রিভুজের উচ্চতা।
ত্রিভুজের বহি:স্থ কোণ:
ত্রিভুজের কোন বাহুকে বর্ধিত করলে যে কোণ উৎপন্ন হয় তাকে ত্রিভুজের বহি:স্থ কোণ বলে।
ত্রিভুজের অন্ত:স্থ কোণ:
বহি:স্থ কোণের সন্নিহিত কোণটি ছাড়া অপর দুটি কোন বহি:স্থ কোনটির অন্ত:স্থ কোণ।
অণুসিদ্ধান্ত:
ত্রিভুজের তিন কোণের সমষ্টি দুই সমকোণ বা ১৮০ ডিগ্রী। ত্রিভুজের কোন একটি বাহু বর্ধিত করলে যে বহি:স্থ কোণ উৎপন্ন হয় তা তার অন্ত:স্থ কোনদ্বয়ের সমষ্টির সমান।
বহি:স্থ কোন কোণ তার অন্ত:স্থ কোনগুলোর প্রত্যেকটির চেয়ে বৃহত্তর।
সমকোণী ত্রিভুজের সুক্ষকোণদ্বয় পরস্পর পুরক কোণ।