প্যারি ডি ফার্মা (Pierre de Fermat):
প্যারি ডি ফার্মা: (জন্ম: 1601 মতান্তরে 1607 ফ্রান্সের বিউমন্ট-ডি-লোমাগনে- মৃত্যু: 12 জানুয়ারী,1665, ক্যাস্ট্রেস) ছিলেন একজন ম্যাজিস্ট্রেট ও 17শতকের একজন ফরাসি গণিতবিদ যাকে প্রায়শই আধুনিক তত্ত্বের প্রতিষ্ঠাতা বলা হয় বা ফের্মার কাজ থেকেই পরবর্তিতে ক্যালকুলাসের জন্ম হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। ১৬৩৭ খ্রিষ্টাব্দে গণিতবিদ পিয়েরে ডি ফার্মা একটি গাণিতিক উপপাদ্য প্রস্তাব করেন এবং যেটি পরবর্তীতে ১৯৯৫ সালে ইংরেজ গণিতবিদ অ্যান্ড্রু ওয়াইল্স প্রমাণ করেন তা ফের্মার শেষ উপপাদ্য হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। ফার্মা উচ্চতর গণিত, সংখ্যাতত্ত্ব ও এনালাইটিক্যাল জ্যামিতেতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। তিনি ব্লেস প্যাসকেলের সাথে প্রোবাবিলিটি থিউরির ভিত্তি স্থাপন করেন।
ব্লেস প্যাসকেল (Blaise Pascal):
ব্লেস প্যাসকেল: ( জন্ম: 19 জুন, 1623 ক্লারমন্ট- ফেরান্ট, ফ্রান্স – মৃত্যু: 19 আগস্ট 1662 প্যারিস) ছিলেন একজন ফরাসী গণিতবিদ, পদার্থবিদ, উদ্ভাবক লেখক ও ক্যাথলিক দার্শনিক। তিনি প্রথম ক্যালকুলেটিং মেশিন উদ্ভাবন করেন এবং তিনি প্রথম ’চাপ’ ও ’শূন্য অবস্থার’ ধারণা ব্যাখ্যা করেন। মাত্র ১৬ বছর বয়সে তিনি অভিক্ষেপ জ্যামিতির উপর একটি তাৎপর্যপূর্ণ নিবন্ধ লিখেন যা বর্তমানের আধুনিক অর্থনিতি এবং সমাজবিজ্ঞানকে প্রভাবিত করছে। তিনি একটি ধর্মীয় মতবাদ প্রচার করেছিলেন যা যুক্তির মাধ্যমে নয় বরং হৃদয়র মাধ্যমে ঈশ্বরের অভিজ্ঞতা শেখায়।
স্যার আইজ্যাক নিউটন ( Sir Isaac Newton):
স্যার আইজ্যাক নিউটন: (জন্ম: 4 জানুয়ারি,1643 খ্রিষ্টাব্দ- মৃত্যু: 31 মার্চ, 1727 খ্রিষ্টাব্দ) ছিলেন একজন বিখ্যাত পদার্থবিদ, গণিতবিদ, জ্যোতির্বিজ্ঞানী, আলকেমিষ্ট ও প্রাকৃতিক দার্শনিক। নিউটনকে ইংরেজি বিশ্বে সর্বকালের সর্ব সেরা বিজ্ঞানি-গণিতবিদ হিসাবে দেখা হয়। তিনি ছোটবেলায় পড়ালেখায় মেনোযোগী ছিলেন না এবং ক্লাসে তার অবস্থান ছিল সবার নিচে। তিনি ‘ফিলোসফিয়া ন্যাচারালিস প্রিন্সিপিয়া ম্যাথামেটিকা’ গ্রন্থে তাঁর সর্বজনীন মহাকর্ষ এবং গতির তিনটি সূত্র বিধৃত করেছিলেন এবং – গ্রন্থটি তিনি ১৬৮৭ খ্রিষ্ঠাব্দে প্রকাশ করেন। তিনিই প্রথম দেখিয়েছিলেন, পৃথিবী এবং মহাবিশ্বের সকল বস্তু একই নিয়মের অধীনে পরিচালিত হচ্ছে। রৈখিক ও কৌণিক ভরবেগের সংরক্ষণ সূত্রের মাধ্যমে তিনি বলবিজ্ঞানের ভিত্তিভূমি রচনা করেন। তিনি আলোক বিজ্ঞানের উপর গবেষণা করেন এবং একটি পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে তিনি নিশ্চিত হন যে ত্রিভূজাকার প্রিজমের মধ্যদিয়ে যাওয়া আলোর বিক্ষেপণ দৃশ্যমান বর্ণালির সৃষ্টি করে। তাঁর প্রধান অবদানগুলো হলো: Universal Law of Gravitation, The Three Laws of Dynamics, Differential & Integral Calculus, The Bionomical Theorem, The discovery of the colors of white light.
গটফ্রায়েড উইলহেম ভন লিবনিজ (Gottfried Wilhelm Leibniz):
গটফ্রায়েড উইলহেম লিবনিজ: (জন্ম: 01 জুলাই, 1646 খ্রিষ্টাব্দ- মৃত্যু: 14 নভেম্বর, 1716 খ্রিষ্টাব্দ) একজন জার্মান দার্শনিক ও গণিতবিদ যিনি একইসাথে ধর্ম, দর্শন, আইন, সাহিত্য, মেটা ফিজিক্স এবং গণিতে পণ্ডিত ছিলেন। তাঁকে ক্যালকুলাসের আবিষ্কর্তা হিসেবে সন্মান দেয়া হয়। আধুনিক কম্পিউটারের মূল ভিত্তি বাইনারি সংখ্যা পদ্ধতি তাঁর উদ্ভাবন এবং তিনি ক্যালকুলাসে ইন্টিগ্রাল চিহ্ণিটির ব্যাবহার জনপ্রিয় করে তুলেন। তিনি বৃত্তের রেফারেন্স ছাড়াই পাই (Π) এর মান বের করার পদ্ধতি বের করেন।
লিওনার্দ ইউলার (Leonhard Euler):
লিওনার্দ ইউলার: (জন্ম: 15 এপ্রিল, 1707 বাসেল, সুইজারল্যান্ড। মৃত্যু: 18 সেপ্টেম্বর, 1783 সেন্ট পিটার্সবার্গ, রাশিয়া) ছিলেন ১৮শতকের সর্বশ্রেষ্ঠ একজন সুইস গণিতবিদ। তাঁকে টপোলজির দাদা বলা হয়। তিনি ক্যালকুলাস, সংখ্যাত্ত্ব, অন্তরক সমীকরণে অনেক গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। তিনি টপোলজির একটি বহুল ব্যাবহারিক দিক গ্রাফ থিওরি আবিষ্কার করেন। ইউলার 30 বছর বয়সে তাঁর একটি চক্ষু হারান এবং 59 বছর বয়সে পুরোপুরি অন্ধ হয়ে যান তবে অন্ধত্বের ফলে তাঁর বৈজ্ঞানিক জীবন বাধাগ্রস্ত হয় নি। তিনি গণিতের প্রায় সকল বিষয়ে অজস্র গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছেন এবং এটি একটি গিনেস রেকর্ড। 2002Euler নামের গ্রহাণুটি তাঁর সন্মানে নামকরণ করা হয়।
মারিয়া এগনেসি (Maria Gaetana Agnesi):
মারিয়া গায়েটানাি এগনেসি: (জন্ম: 16 মে, 1718 মৃত্যু: 9 জানুয়ারি, 1799) ছিলেন ইতালির একজন বিশ্ববিখ্যাত মহিলা গণিতবিদ, দার্শনিক ও মানবতাবাদী। মহিলাদের মধ্যে তিনিই প্রথম ক্যালকুলাসের/ গণিতের উপর হ্যান্ডবুক লিখেছিলেন এবং তিনিই প্রথম মহিলা যিনি অধ্যাপক হিসেবে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ পেয়েছিলেন। মারিয়া এগনেসি মিলানে একটি ধনী ও শিক্ষিত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ছোটবেলা থেকেই তাঁর জ্ঞানের কথা ছরিয়ে পরে এবং তাকে ডাকা হতো ‘ওরাকল অব দি সেভেন টাঙ্গস।’ তিনি ছোটবেলাতেই নিউটন, লিবনিজ, ডিসক্রিট প্রভৃতি গণিতবিদদের গণিত আয়ত্ত্ব করেছিলেন। তিনি গণিত ও বিজ্ঞানের উপর অনেক সভা আয়োজন করতেন এবং মাত্র ২০ বছর বয়সে তাঁর বই বের হয়।
কার্ল ফ্রেডরিক গাউস (Carl Friedrich Gauss):
কার্ল ফ্রেডরিক গাউস: (জন্ম: 30 এপ্রিল 1777- মৃত্যু: 23 ফেব্রুয়ারি 1855) একজন প্রতিভাবান জার্মান গণিতবিদ এবং বিজ্ঞানী। তাঁকে ‘গণিতের যুবরাজ’ এবং ’সর্বকালের সেরা গণিতবি’ বলা হয়। তিনি সংখ্যা তত্ত্ব, গাণিতিক বিশ্লেষণ, অন্তরক জ্যামিতি , চুম্বকের ধর্ম , আলোক বিজ্ঞান, জোর্তিবিজ্ঞান ইত্যাদি বিষয়ে ভূয়সী অবদান রাখেন। গাউস ছোটবেলা থেকেই অসম্ভব প্রতিভাবান ছিলেন। তিনি ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ তিনজন গণিতবিদের মধ্যে তিনি একজন ( অন্য দুইজন হলেন- নিউটন ও আর্কিমিডিস)। তিনি ১৮৩৮ সালে ‘কপলি পদক’ লাভ করেন।
অগস্টা এডা বায়রন (Augusta Ada or Ada Lovelace):
অগস্টা অ্যাডা (জন্ম: ১০ ডিসেম্বর, ১৮১৫- মৃত্য: ২৭ নভেম্বর, ১৮৫২) বিশ্বের প্রথম কম্পিউটার প্রোগামার। তিনি চার্লস ব্যাবেজের অন্যালিটিক্যাল ইন্জিন– এর একটি বর্ণনা লিখেন-এটাকেই প্রথম কম্পিউটার প্রোগ্রাম ধরা হয়। অগস্টা অ্যাডা ইংরেজ কবি লর্ড বায়রনের কন্যা এবং তাঁর পুরো নাম অ্যাডা অগস্টা কিং এবং তাঁকে ডাকা হয় কাউন্টেস অব লাভলেস বা অ্যাডা লাভলেস। তিনি মাত্র ৩৬ বছর বয়সে জরায়ুর ক্যান্সার এবং অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মৃত্যুবরণ করেন। 1979 সালে তাঁর প্রতি সন্মান দেখিয়ে, আমেরিকার ডিফেন্স বিভাগ এডা নামক একটি কম্পিউটারের ভাষা তৈরি করে।
জর্জ বুল (George Boole):
জর্জ বুল: (জন্ম: 2 নভেম্বর, 1815- মৃত্যু: 8 ডিসেম্বর1864) একজন ব্রিটিশ গণিতবিদ ও দার্শনিক। তিনি লজিক শাস্ত্রে সিম্বল ব্যাবহার শুরু করেন এবং তাঁকে গাণিতিক যুক্তিবিদ্যার (mathematical logic) জনকদের একজন বিবেচনা করা হয়। তিনি বুলিয়ান বীজগণিতের উপর ১৮৪৭ সালে The mathematical Analysis of Logic নামক বইটি প্রকাশ করেন। তাঁর প্রধান কাজ: Investigation of the Laws of Thought ১৮৫৪ সালে প্রকাশিত হয়। সেটের বেসিক অপারেশন ইউনিয়ন ও ইন্টারসেকশন বুলিয়ান এলজাবরা নামে খ্যাত। বর্তমানে সাউন্ড রিজনিং এর ক্ষেত্রে বুলিয়ান এলজাবরা বহুলভাবে ব্যবহৃহ হচ্ছে।
জর্জ ক্যান্টর (George Ferdinand Ludwig Philipp Cantor):
জর্জ ক্যান্টর: (জন্ম: ৩ মার্চ, ১৮৪৫ সেন্ট পিটার্সবার্গ, রাশিয়া। মৃত্যু: ৬ জানুয়ারি ১৯১৮ (বয়স ৭২) হালে, জার্মানি) তিনি ছিলেন একজন বিখ্যাত জার্মান গণিতবিদ যিনি সেট থিউরির প্রতিষ্ঠাতা। যদিও কেন্টরের সেট থিউরি তৎকালীন পণ্ডিত সমাজ সুনজরে দেখেনি এবং এজন্য তাকে অনেক ভৎসনা সহ্য করতে হয়েছিল কিন্তু ১৯০৪ সালে গণিতের জন্য রয়্যাল সোসাইটি কর্তৃক প্রদত্ত সর্বেোচ্চ স্বীকৃতি স্বরুপ পুরস্কার সিল্ভেস্টার মেডাল অর্জন করেন। এই মেডালের মাধ্যমে তাঁর অবদানকে সন্মান জানানো হয়েছে। জর্জ ক্যান্টর সেটের মধ্যে ঐকিক সমন্ধ (one-to-one correspondence) স্থাপনের ক্ষেত্রে অবদান রাখেন এবং অসীম ও সুবিন্যাস্ত সেটকে সংজ্ঞায়িত করেন। তিনি অংকবাচক ও ক্রমবাচক সংখ্যাকে সংজ্ঞায়িত করেন এবং তিনি প্রমাণ করেন যে, বাস্তব সংখ্যা স্বাভাবিক সংখ্যার চাইতে সংখ্যায় বেশি।
রামানুজন (Ramanujan):
শ্রীনিবাস রামানুজান: (জন্ম: ২২ ডিসেম্বর, ১৮৮৭- মৃত্যু: ২৬ এপ্রিল, ১৯২০) ছিলেন একজন বিশ্ববিখ্যাত ভারতীয় গণিতবিদ। তিনি নম্বার থিওরিতে অসামান্য অবদান রাখেন। প্রথাগত শিক্ষা না থাকলেও তিনি নিজ প্রচেষ্টায় গণিতের বিভিন্ন শাখায়, গাণিতিক বিশ্লেষণে, সংখ্যাতত্ত্ব, অসীম ধারা ও আবৃত্ত ভগ্নাংশ শাখায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। ইংরেজ গণিতবিদ জি এইচ হার্ডি তাঁকে অয়েলার ও গাউসের সমপর্যায়ের গণিতবিদ মনে করেন। তাঁর বিশেষ অবদান: রামানুজনের সমষ্টি, ল্যান্ডাউ-রামানুজন ধ্রুবক, মক থিটা ফাংশন, ধ্রুবক, রামানুজানের প্রধান উপপাদ্য ইত্যাদি। তিনি ১৯১৮ সালে ফেলো অব দ্য রয়েল সোসাইটি পুরষ্কার পান।
জন ভন নিউম্যান (John von Neumann):
জন ভন নিউম্যান: (জন্ম: 28 ডিসেম্বর, 1903- মৃত্যু: 8 ফ্রেবুয়ারি, 1957) ছিলেন একজন হাঙ্গেরিয়ান- আমেরিকান গণিতবিদ, পদার্থবিদ, কম্পিউটার বিজ্ঞানী ও প্রকৌশলী। তিনি খাঁটি এবং প্রায়োগিক বিজ্ঞানকে সংহত করেছিলেন। তাঁকে তার সময়ের শীর্ষস্থানীয় গণিতবিদ হিসেবে বিবেচনা করা হতো। তিনি কোয়ান্টাম মেকানিক্সের জন্য অপারেটর তত্ত্ব প্রয়োগের পথিকৃৎ এবং গেম তত্ত্বের বিকাশ, সেলুলার নির্মাতা এবং ডিজিটাল কম্পিউটার ধারণাগুলোর একজন মূল ব্যাক্তিত্ত্ব। তিনি ম্যানিয়াক (MANIAC- Mathematical Analyser Numerical Integrator and Computer) তৈরিতে সাহায্য করেন। তিনি এটম বোমা ও মিসাইল তৈরিকে সাহায্য করেন।
ডোনাল্ড আরভিন নুথ ( Donald Ervin Knuth):
ডোনাল্ড আরভিন নুথ: (জন্ম: ১০ জানুয়ারি ১৯৩৮ উইসকনসিন, যুক্তরাষ্ট্র) একজন মার্কিন কম্পিউটার বিজ্ঞানী ও স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়র একজন এমেরিটাস প্রফেসর। আরভিন নুথকে বলা হয় অ্যালগরিদমিক বিশ্লেষণের জনক। তিনি এলগরিদমের পারফরম্যান্স বিশ্লেষণের জন্য গাণিতিক পদ্ধতিকে সমৃদ্ধ করেন। তাঁর লেখা বই: The art of Computer Programing, Concrete Mathematics এবং Scientic writing software- TeX সারা পৃথিবীতে সমদৃত। শৈশব থেকেই তিনি অপ্রচলিত পথে বুদ্ধি কাজে লাগানোর ব্যাপারে পারদর্শী ছিলেন। তিনি ১৯৭৪ সালে টুরিং পুরস্কার, ১৯৯৫ সালে ফন নয়ম্যান মেডাল এবং ১৯৯৬ সালে কিয়োটা পুরস্কার লাভ করেন।