মহাবিশ্ব (Universe)
আমাদের বাসভূমি পৃথিবীর চারদিকে ঘিরে রয়েছে অসিম অন্তহীন মহাকাশ যে মহাকাশের কোন আদি-অন্ত বিজ্ঞানিরা আজোও খুজে পায়নি। মহাকাশে রয়েছে চন্দ্র-সূর্যের ন্যায় অসংখ্য জ্যোতিষ্ক রয়েছে গ্রহ, নক্ষত্র, ধুমকেতু,উল্কা, নিহারিকা, রয়েছে কৃষ্ণবামন, কৃষ্ণসাগর সহ লক্ষ লক্ষ কোটি কোটি মহাজাগতিক বস্তু যারা সুশৃঙ্খলভাবে ঘুরে বেড়ায়। আর এ সৃষ্টি জগতে যা কিছু আছে সকল মহাজাগতিক বস্তু এবং আমাদের এই পৃথিবী- পৃথিবীতে বসবাসকারী ক্ষুদ্র পোকামাকড়, ধুলিকণা সকল কিছু নিয়েই এই মহাবিশ্ব।
মহাবিশ্ব কিভাবে সৃষ্টি হয়েছে?
মহাবিশ্বের উৎপত্তি ও বিকাশ সর্ম্পকে যতগুলো তত্ত্ব রয়েছে তার মধ্যে বহুল প্রচলিত হলো ’বিগব্যাঙ (Big Bang)’ থিওরি। বাংলায় যাকে বলে ’মহাবিস্ফোরণ’ তত্ত্ব। ‘বিগব্যাঙ’ তত্ত্বের প্রবক্তা বেলজিয়ামের বিজ্ঞানি জি. ল্যামেটার। ’বিগব্যাঙ’ তত্ত্ব অনুযায়ি কোটি কোটি বছর পূর্বে এক সময় ছোট অথচ ভিষণ ভারী অত্যন্ত উত্তপ্ত একটি বস্তুপিণ্ড বিস্ফোরিত হয়ে প্রসারিত হয়। এ বিষ্ফোরণকে বলা হয় ‘Big Bang’ বা ’মহাবিস্ফোরণ’ আর এই মহাবিস্ফোরণ থেকেই মহাবিশ্বের সৃষ্টি। দ্রুত প্রসারণের ফলে মহাবিশ্ব ঠান্ডা হতে শুরু করে এবং অতি ক্ষুদ্র কণাগুলো প্রথমে ছোট ছোট কণায় পরিণত হয়। তারপর ছোট কণাগুলো কিছুটা ঠাণ্ড ও একত্রিত হয়ে জ্যোতিষ্ক পরিণত হয় এবং বর্তমান প্রসারণশীল অবস্থায় পৌছায়।
সর্ম্পকিত তথ্য:
- ‘Big Bang‘ তত্ত্বের আধুনিক ব্যাখ্যা উপস্থাপন করেন- ব্রিটিশ পদার্থ বিজ্ঞানি স্টিফেন হকিং।
- ’মহাবিশ্বের’ সৃষ্টি, বিবর্তন ও চূড়ান্ত পরিণতি সংক্রান্ত বিজ্ঞানকে বলে- ’বিশ্বসৃষ্টিতত্ত্ব’ বা ‘Cosmology’.
- স্টিফেন হকিং ‘Big Bang‘ তত্ত্বের আধুনিক ব্যাখ্যা প্রদান করেন- ‘A Brief History of Times’ গ্রন্থে।
- মহাবিশ্ব সৃষ্টির পূর্বমুহূর্তকে বলা হয়- টাইম জিরো বা জিরো আওয়ার।
- ‘Big Bang’ সংঘটিত হয়েছিল- ১৩.৭৫ বিলিয়ন বছর আগে।
- মহাবিশ্বের বয়স- ১৩৭৫ কোটি বছর।
- ‘Big Bang’ এর ফলে সৃষ্টি হয় স্থান, সময়, শক্তি ও পদার্থের।
- জোর্তিবিজ্ঞানের জনক- হিপ্পার্কাস।
- আধুনিক জোর্তিবিজ্ঞানের জনক- গ্যালিলিও গ্যালিলি।
নক্ষত্র:
যেসব জ্যোতিষ্কের নিজস্ব আলো ও তাপ রয়েছে তাদের নক্ষত্র বলে। মেঘমুক্ত রাতের আকাশে আমরা অনেক আলোক বিন্দুকে মিটমিট করে জ্বলতে দেখি এগুলো হলো মুলত নক্ষত্র। নক্ষত্রগুলো হলো মূলত জলন্ত গ্যাসপিণ্ড।
সর্ম্পকিত তথ্য:
- আলোর তিব্রতা অনুসারে নক্ষত্র তিন ধরণের- লাল (বৃহৎ), নীল (ছোট) ও হলুদ (মাঝারি)।
- মহাবিশ্বের বৃহত্তম নক্ষত্র- বেটেলগম।
- আকাশের উজ্জ্বলতম নক্ষত্র- লুদ্ধক (Sirius)
- সূর্যের নিকটতম নক্ষত্র- প্রক্সিমা সেন্টারাই (Proxima Centauri)
- পৃথিবীর নিকটতম নক্ষত্র- সূর্য।
- পৃথিবীর দ্বিতীয় নিকটতম নক্ষত্র- প্রক্সিমা সেন্টারাই। পৃথিবী থেকে দূরত্ব ৪.২৪ আলোকবর্ষ।
- কোন নক্ষত্রের জ্বালানী শেষ হয়ে অনুজ্জ্বল সাদা রঙের তারকায় পরিণত হলে তাকে বলে- White Draft বা শ্বেত বামন।
- মহাশূন্য থেকে আগত রশ্মি বা কণাকে বলে- কসমিক রে।
- ধ্রুবতারা একটি নক্ষত্র।
- ধ্রুবতারা দেখা যায়- উত্তর গোলার্ধে।
নক্ষত্রমন্ডলী:
মেঘমুক্ত অন্ধকার রাতের আকাশের দিকে তাকালে মনে হয় কতগুলো নক্ষত্র বিশেষ আকৃতিতে জোট বেঁধেছে। এরুপ বিশেষ আকৃতির নক্ষত্রদলকে নক্ষত্রমণ্ডলী বলে। প্রাচীনকালে জ্যোর্তিবিজ্ঞানীগণ এরুপ নক্ষত্রদলকে কাল্পনিক রেখা দ্বারা যুক্ত করে বিভিন্ন নামে ভুষিত করেছেন। যেমন: সপ্তর্ষিমণ্ডল (Great Bear), লঘুসপ্তর্ষি (Little Bear), কালপুরুষ (Orion), ক্যাসিওপিয়া (Cassiopeia), বৃহৎ কুক্কুরমণ্ডল (Canis Major) ইত্যাদি।
নীহারিকা:
নিহারিকা হলো মহাকাশে অসংখ্য স্বল্পালোকিত তারকার আস্তরণ বা ধুলিকণা, হাইড্রোজেন গ্যাস, ও প্লাজমা দ্বারা গঠিত এক ধরনের আন্ত:নাক্ষত্রিক মেঘ । এক একটি নীহারিকার মধ্যবর্তী দূরত্ব ব্যাপক এবং একটি নীহারিকার মধ্যে কোটি কোটি নক্ষত্র থাকতে পারে।
গ্যালাক্সি:
গ্যালাক্সি হল মাধ্যাকর্ষণ শক্তি দ্বারা আবদ্ধ মহাকাশে গ্রহ, নক্ষত্র, ধুমকেতু, ধুলিকণা, আন্তঃ নাক্ষত্রিক গ্যাস এবং অন্ধকার পদার্থের একটি সু-বিশাল সংগ্রহ জোতিষ্কদল । কোন একটি গ্যালাক্সির ক্ষুদ্র অংশকে ছায়াপথ বলে। গ্যালাক্সিগুলো বিভিন্ন আকৃতির হতে পারে তবে অধিকাংশ গ্যালাক্সি সর্পিলাকার বা উপবৃত্তাকার হয়ে থাকে। একটি গ্যালাক্সি বা ছায়াপথের মধ্যে দশ মিলিয়ন থেকে শুরু করে একশ ট্রিলিয়ন নক্ষত্র থাকতে পারে আর মহাবিশ্বে গ্যালাক্সি রয়েছে ২০০বিলিয়ন থেকে ২ট্রিলিয়ন।
গ্যালাক্সির প্রকারভেদ:
গ্যালাক্সি বা ছায়াপথগুলিকে চার প্রকারে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়:
১. সর্পিল। ২. উপবৃত্তাকার।
৩. অনিয়মিত। ৪. লেন্টিকুলার।
ছায়াপথ (Milky Way):
ছায়াপথ হলো গ্যালাক্সির ক্ষুদ্র অংশ। অন্ধকার আকাশে উত্তর-দক্ষিণে কতগুলো উজ্জ্বলদীপ্ত দীর্ঘ পথের মতো তারকারাশি দেখা যায় এগুলো ছায়াপথ বা Milky Way.
উল্কা (Meteor):
রাতের মেঘমুক্ত অন্ধকার আকাশে অনেক সময় মনে হয় যেন কোন তারকা এই মাত্র খসে পড়ল- এগুলো হলো মূলত উল্কা। মহাকাশে অসংখ্য জড়পিণ্ড ভেসে বেড়ায়। এই জড়পিণ্ডগুলো অভিকর্ষ বলের কারণে কখনো পৃথিবীর দিকে ছুটে আসে এবং বায়ুর সংস্পর্শে এসে আগুন ধরে যায়। এ ঘটনাকে উল্কাপতন বলে।
ধূমকেতু:
মহাকাশে মাঝে মাঝে কিছুদিনের জন্য এক প্রকার জ্যোতিষ্কের আবির্ভাব ঘটে এবং কিছুদিন পর তা অদৃশ্য হয়ে যায় এগুলোকে ধূমকেতু বলে। ধূমকেতু শিলা, হিমায়িত গ্যাস ও ধুলিকণা দ্বারা তৈরি এবং এদের একটি মাথা ও একটি লেজ থাকে। ধূমকেতু দির্ঘপধে সূর্যকে পরিক্রমণ করে এবং সূর্যের নিকটবর্তী হলে তাদের দেখা যায়। জ্যোর্তিবিজ্ঞানি এডমন্ড হ্যালি যে ধূমকেতু আবিষ্কার করেন তা হ্যালির ধূমকেতু নামে পরিচিত। হ্যালির ধূমকেতু ২৪০ খ্রিষ্ঠপূর্ব অব্দ থেকে দেখা যায় এবং সর্বশেষ ১৯৮৬ সালে দেখা গেছে। এ ধূমকেতু ৭৬ বছর পর পর দেখা যায় সে হিসেবে পরবর্তী ২০৬২ সালে আবার দেখা যাওয়ার কথা।
গ্রহ:
মহাকর্ষ বলের প্রভাবে কতগুলো জ্যোতিষ্ক সূর্যকে আবর্তন করে নির্দিষ্ট কক্ষপথে ঘুরে; এদেরকে গ্রহ বলে। গ্রহগুলোর নিজস্ব আলো ও তাপ নেই; এরা সূর্য থেকে আলো ও তাপ পেয়ে থাকে। যেমন: পৃথিবী, মঙ্গল, বুধ ইত্যাদি।
উপগ্রহ:
যে জ্যোতিষ্কগুলো গ্রহকে আবর্তন করে চারদিকে পরিভ্রমণ করে তাদের উপগ্রহ বলে। যেমন: চাঁদ পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহ।