অজি অসবর্ন: হেভি মেটালের ‘গডফাদার’-এর জীবনাবসান
বিশ্ব সংগীতে এক যুগের অবসান ঘটিয়ে প্রয়াত হলেন ‘প্রিন্স অফ ডার্কনেস’ ও ‘গডফাদার অফ হেভি মেটাল’ নামে পরিচিত কিংবদন্তী গায়ক অজি অসবর্ন।[1][2] ৭৬ বছর বয়সে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।[3][4][5] তার পরিবারের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, “অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি যে আমাদের প্রিয় অজি অসবর্ন আজ সকালে প্রয়াত হয়েছেন। তিনি তার পরিবারের সঙ্গে এবং ভালোবাসায় পরিবেষ্টিত ছিলেন।”[1][3][4][5][6]
অসবর্নের মৃত্যুর নির্দিষ্ট কারণ জানানো না হলেও, তিনি বেশ কয়েক বছর ধরে পারকিনসন রোগে ভুগছিলেন।[3][4][7][8] ২০১৯ সালে বাড়িতে পড়ে গিয়ে গুরুতর আঘাত পাওয়ার পর তার শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হয় এবং একাধিক অস্ত্রোপচারও করতে হয়েছিল।[3][4][7][8]
প্রাথমিক জীবন ও ব্ল্যাক সাবাথ:
১৯৪৮ সালের ৩রা ডিসেম্বর ইংল্যান্ডের বার্মিংহামে জন মাইকেল “অজি” অসবর্নের জন্ম।[9] ছোটবেলায় ডিসলেক্সিয়ায় আক্রান্ত অসবর্ন বিদ্যালয়ের পড়াশোনা শেষ করতে পারেননি।[9][10] ১৯৬৭ সালে তিনি গিটারিস্ট টনি আয়োমি, বেসিস্ট গিজার বাটলার এবং ড্রামার বিল ওয়ার্ডের সঙ্গে இணைந்து তৈরি করেন ব্যান্ড ‘পলকা টাল্ক ব্লুজ’, যা পরবর্তীতে ‘ব্ল্যাক সাবাথ’ নামে বিশ্বজুড়ে খ্যাতি লাভ করে।[11] তাদের প্রথম অ্যালবাম ‘ব্ল্যাক সাবাথ’ (১৯৭০) হেভি মেটাল সংগীতের ইতিহাসে একটি মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হয়।[12] এরপর ‘প্যারানয়েড’, ‘মাস্টার অফ রিয়েলিটি’-র মতো অ্যালবামগুলি তাদের জনপ্রিয়তাকে শিখরে পৌঁছে দেয়।[9]
একক ক্যারিয়ার ও বিতর্ক:
মাদকাসক্তি এবং ব্যান্ডের অন্য সদস্যদের সঙ্গে মতবিরোধের কারণে ১৯৭৯ সালে অজি ব্ল্যাক সাবাথ থেকে বিতাড়িত হন।[9] এরপর তিনি ‘ব্লিজার্ড অফ অজ’ ব্যান্ডের সঙ্গে একক শিল্পী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন এবং বিপুল সাফল্য পান।[4] তার একক অ্যালবামগুলির মধ্যে ‘ডায়েরি অফ এ ম্যাডম্যান’ অন্যতম।[4] তবে তার ক্যারিয়ার বিতর্কমুক্ত ছিল না। মঞ্চে জীবন্ত বাদুড়ের মাথা ছিঁড়ে খাওয়া থেকে শুরু করে বিভিন্ন বিতর্কিত মন্তব্য তাকে প্রায়শই খবরের শিরোনামে রাখত।[5][12]
ব্যক্তিগত জীবন ও শেষ জীবন:
অজি দু’বার বিয়ে করেন।[11] তার দ্বিতীয় স্ত্রী শ্যারন অসবর্ন তার ম্যানেজারও ছিলেন।[9] তাদের তিন সন্তান – অ্যামি, কেলি ও জ্যাক।[13] ২০০০-এর দশকের শুরুতে রিয়েলিটি শো ‘দ্য অসবর্নস’-এর মাধ্যমে তার পারিবারিক জীবন সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছায়।[9]
জীবনের শেষ কয়েক বছর শারীরিক অসুস্থতার সঙ্গে লড়াই করেছেন অজি। পারকিনসন রোগের পাশাপাশি তার একাধিক অস্ত্রোপচারও হয়।[8][14] অসুস্থতা সত্ত্বেও তিনি সংগীতের প্রতি তার ভালোবাসা ছাড়েননি। মৃত্যুর মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে, ৫ই জুলাই, ২০২৫-এ তিনি ব্ল্যাক সাবাথের সঙ্গে একটি বিদায়ী অনুষ্ঠানে অংশ নেন।[4][9]
অজি অসবর্নের প্রয়াণে বিশ্ব সংগীতে এক অপূরণীয় শূন্যতার সৃষ্টি হলো। হেভি মেটালের জগতে তার অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।
Sourceshelp