তাপ কী
তাপ এক প্রকার শক্তি যা আমাদের শরীরে ঠান্ডা বা গরমের অনুভূতি জাগায়। অন্য ভাবে বলা যায়, যে বাহ্যিক কারণে ঠান্ডা বা গরমের অনুভূতি হয় তাকে তাপ বলে। পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের মধ্যে কেবল ত্বক দ্বারা তাপকে অনুভব করা যায়।
গুরুত্বপূর্ণ্য তথ্য:
- তাপের CGS একক ক্যালরি।
- তাপের S.I একক জুল।
- 1 ক্যালরি = 4.2 জুল।
- এক গ্রাম পানির তাপমাত্রা এক ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি করতে যে পরিমাণ তাপের প্রয়োজন হয় তাকে এক ক্যালরি তাপ বলে।
তাপমাত্রা
তাপমাত্রা হলো কোন বস্তুর তাপীয় অবস্থা। অর্থাৎ, কোন বস্তুর মধ্যে কতটুকু তাপ রয়েছে তার পরিমাণই হলো তাপমাত্রা। কোন বস্তুর তাপীয় অবস্থা নির্ধারণ করে বস্তুটি অন্য বস্তুর সংর্স্পশে এলে বস্তুটি তাপ গ্রহণ করবে না বর্জন করবে।
- CGS পদ্ধতিতে তাপমাত্রার একক সেলসিয়াস (C)
- SI পদ্ধতিতে তাপমাত্রার একক কেলভিন (K)।
- 00C বা 273(k) তাপমাত্রাকে বলা হয় প্রমাণ তাপমাত্রা।
- -2730C বা 0(K) তাপমাত্রাকে বলা হয় পরমশূণ্য তাপমাত্রা।
- পরমশূন্য তাপমাত্রায় গ্যাসের আয়তন- শূন্য।
তাপমাত্রা পরিমাপ:
কোনকিছু পরিমাপের জন্য যেমন একটি আদর্শ মান ঠিক করে নেওয়া হয় এবং সেই আদর্শ মানের সাথে তুলনা করে পরিমাপ করা হয়। তেমনি তাপমাত্রা পরিমাপেরও আদর্শ মান রয়েছে। এক্ষেত্রে নির্দিষ্ট দুটি তাপমাত্রার ব্যাবধানকে আদর্শ মান ধরে নেওয়া হয় এবং এদেরকে স্থিরাঙ্ক বলে।
নিম্ন স্থিরাঙ্ক: স্বাভাবিক চাপে যে তাপমাত্রায় বরফ গলে পানিতে পরিণত হয় তাকে নিম্ন স্থিরাঙ্ক বলে। সেলসিয়াস স্কেলের নিম্ন স্থিরাঙ্ক 00 সেলসিয়াস।
উর্দ্ধ স্থিরাঙ্ক: স্বাভাবিক চাপে যে তাপ মাত্রায় পানি বাস্পে পরিণত হয় তাকে উর্দ্ধ স্থিরাঙ্ক বলে। সেলসিয়াস স্কেলের উর্দ্ধ স্থিরাঙ্ক 1000 সেলসিয়াস।
তাপমাত্রা পরিমাপের পাঁচটি স্কেল রয়েছে। এগুলো হলো: সেলসিয়াস স্কেল, ফারেনহাইট স্কেল, কেলভিন স্কেল, রোমার স্কেল, র্যাংঙ্কিন স্কেল।
সেলসিয়াস স্কেল
সেলসিয়াস স্কেলের উদ্ভাবক সুইডিশ জ্যোর্তিবিজ্ঞানি অ্যান্ডার্স সেলসিয়াস। এর নামানুসারে এই স্কেলের নামকরণ করা হয়। এই বিজ্ঞানি 1742 সালে এই স্কেলের প্রস্তাব করেছিলেন। সেলসিয়াস স্কেলকে আগে সেন্টিগ্রেড স্কেলও বলা হতো। সেন্টিগ্রেড শব্দটি ল্যটিন শব্দ সেন্টাম ও গ্রাডার্স থেকে এসেছে। সেন্টাম অর্থ 100 আর গ্রাডার্স অর্থ ধাপ। সেলসিয়াস স্কেলের নিন্ম স্থিরাঙ্ক 00c এবং উর্দ্ধ স্থিরাঙ্ক 1000c সেলসিয়াস। স্কেলে উর্দ্ধ স্থিরাঙ্ক ও নিন্ম স্থিরাঙ্কের মধ্যে 100 টি সমান দাগ কাটা হয়েছে। নিন্ম স্থিরাঙ্ক ও উর্দ্ধ স্থিরাঙ্কের মধ্যকার পার্থককে মৌলিক ব্যাবধান বলে।
ফারেনহাইট স্কেল:
বিজ্ঞানী ফারেনহাইট এই স্কেল আবিস্কার করেন এবং তাঁর নামানুসারে এই স্কেলকে ফারেনহাইট স্কেল বলে। ফারেনহাইট স্কেলের নিম্ন স্থিরাঙ্ক ৩২0 এবং উর্দ্ধ স্থিরাঙ্ক ২১২0। মধ্যবর্তি ব্যবধানকে ১৮০ ভাগে ভাগ করা হয়েছে এবং প্রত্যেক ভাগকে এক ডিগ্রী ফারেনহাইট বলা হয়।
গুরুত্বপূর্ণ্য তথ্য:
- মানুষের শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা- ৯৮.৪0F বা ৩৬.৯0 C
- ক্লিনিক্যাল থার্মোমিটারে দাগ কাটা থাকে 950 – 1100F
- সেলসিয়াস স্কেল ও ফারেনহাইট স্কেলে একই পাঠ দেয় যে তাপমাত্রা -400 (মাইনাস 400)।
- ফারেনহাইট ও কেলভিন স্কেলে একই তাপমাত্রা দেয়- 574.250।
- পানির ঘনত্ব সবচেয়ে বেশি 40C তাপমাত্রায়।
- কেলভিন স্কেলে নিম্ন স্থিরাঙ্ক 2730(k) এবং উর্ধ্ব স্থিরাঙ্ক 373(K) [মৌলিক দূরত্ব 100]।
- রোমার স্কেলে নিম্ন স্থিরাঙ্ক 00(R) এবং উর্দ্ধ স্থিরাঙ্ক 800(R) [মৌলিক দূরত্ব 100]।
তাপ সঞ্চালন
উচ্চ তাপমাত্রার স্থান থেকে তাপ নিম্ন তাপমাত্রার স্থানে প্রবাহিত হয়। একে তাপ সঞ্চালন বলে। তিন ভাবে তাপ সঞ্চালিত হতে পারে। যথা: পরিবহন, পরিচলন ও বিকিরণ।
তাপ পরিবহন:
কঠিন পদার্থের মধ্যদিয়ে তাপ বিকিরণ পদ্ধতিতে এক স্থান হতে অন্য স্থানে স্থানান্তরিত হয়। তাপ পরিবহনে কঠিন পদার্থের কণাগুলো স্থান পরিবর্তন করে না। কিন্তু তাপ গ্রহণের ফলে কণাগুলো নিজের স্থানে কম্পিত হতে থাকে এবং পাশের ঠান্ডা কণাকে তাপ দিতে থাকে। একইভাবে পাশের ঠাণ্ডা কণা উত্তপ্ত হয়ে কম্পিত হয় এবং তার পাশের ঠান্ডা কণাকে তাপ দিতে থাকে। এভাবে কণাগুলো নিজেরা স্থান পরিবর্তন না করেও তাপকে গরম প্রান্ত হতে ঠান্ডা প্রান্তে নিয়ে যায়- এবং একে তাপ পরিবহন বলে। ধাতব পদার্থের মধ্যে লোহা, তামা, দস্তা, পিতল, অ্যালুমিনিয়াম ইত্যাুদি দ্রুত তাপ পরিবহন করে। তাই রান্নার কাজে ধাতব পদার্থের হাড়ি-পাতিল ব্যবহার করা হয়। আবার অধাতু যেমন: কাঠ, মাটি, সুতি কাপড় ইত্যাদি তাপ পরিবহন করে কিন্তু খুবই কম পরিমাণে। তাই রান্নার কাজে আমরা কাঠের নাড়ানি ও ধরার জন্য সুতি কাপড় ব্যবহার করি।
তাপ পরিচলন:
তরল ও বায়বীয় পদার্থের মধ্য দিয়ে পরিচলন পদ্ধতিতে তাপ এক স্থান হতে অন্য স্থানে স্থানান্তরিত হয়। কোন পাত্রে পানি নিয়ে চুলার উপরে বসালে প্রথমে নিচের পানির কণাগুলো শক্তি গ্রহণ করে এবং উত্তপ্ত ও হালকা হয়ে উপরে উঠে আসে। উপরের ঠান্ডা কণা নিচে নেমে আসে এবং তাপ ও শক্তি গ্রহণ করে। এভাবে কণাগুলোর স্থান পরিবর্তনের মাধ্যমে তাপ সঞ্চালন প্রক্রিয়ার নাম পরিচলন।
তাপ বিকিরণ
যেখানে কোন জড় মাধ্যম বা বায়বীয় পদার্থ নেই সেখানে তাপ বিকিরণের মাধ্যমে সঞ্চালিত হয়। বিকিরণের মাধ্যমে তরঙ্গাকারে তাপ সঞ্চালিত হয়। সূর্য থেকে বিকিরণের মাধ্যমে পৃথিবীতে তাপ আসে।
বস্তুর অবস্থার পরিবর্তনে তাপের প্রভাব:
কোন বস্তুর ওপড় তাপ প্রয়োগ করলে তার অণুগুলোর কম্পন বেড়ে যায় এবং আন্ত-আণবিক শক্তি শিথিল হয়ে পরে। তাপ প্রয়োগ আরো বৃদ্ধি করলে এক পর্যায়ে অণুগুলো একে অন্যের উপর গড়াগড়ি খেয়ে নড়াচড়া করতে থাকে- এ অবস্থাকে আমরা বলি তরল। তাপমাত্রা আরো বৃদ্ধি করলে অণুগুলো মুক্ত হয়ে ছোটাছুটি শুরু করে- এ অবস্থাকে বলি গ্যাস।
আপেক্ষিক তাপ (Specific Heat)
1 kg ভরের কোন পদার্থের তাপমাত্রা 1k বাড়াতে যে পরিমাণ তাপের প্রয়োজন তাকে ঐ পদার্থের আপেক্ষিক তাপ বলে।
- আপেক্ষিক তাপের একক- জুল/কেজি-কেলভিন (JKg-1 K-1)
- পানির আপেক্ষিক তাপ 4200 JKg-1K-1 বা 4.2 Jg-1K-1
ক্যালোরিমিতি:
- উচ্চ তাপমাত্রার কোন বস্তু নিম্ন তাপমাত্রার বস্তুকে ততক্ষণ তাপ দিতে থাকবে যতক্ষণ পর্যন্ত না দুই বস্তুর তাপমাত্রা সমান হয়।
- উচ্চ তাপমাত্রার বস্তু ততটুকু তাপ পরিত্যাগ করবে নিম্ন তাপমাত্রার যতটুকু তাপ গ্রহণ করবে। [শর্ত কোন তাপ নষ্ট না হলে।]
গলনাঙ্ক ও চাপ:
কোন বস্তুর উপর চাপ প্রয়োগ করলে তার গলনাঙ্ক কমে যায়। এজন্য দুই টুকরো বরফকে চাপ দিয়ে জোরা লাগানো যায়। দুই খণ্ড বরফের মধ্যে চাপ প্রয়োগ করা হলে, যেখানে চাপ পরে সেখানকার গলনাঙ্ক কমে যায় এবং ঐ তাপমাত্রাতেই বরফ গলে পরিনত হয় এবং চাপ সরিয়ে নিলে বরফ আগের মান ফিরে পায় ও এক খণ্ড বরফে পরিণত হয়।
স্ফুটনাঙ্ক ও চাপ:
চাপ প্রয়োগে স্ফুটনাঙ্ক বৃদ্ধি পায় আবার চাপ কমালে স্ফুটনাঙ্ক কমে যায়। তাই পর্বতের উপরে রান্ন করতে বেশি সময় লাগে। পর্বতের উপড়ে বায়ুর চাপ কম থাকায় পানি তুলনামূলক কম তাপমাত্রায় ফুটতে থাকে আবার প্রেসার কুকারে চাপ বাড়িয়ে পানির স্ফুটনাঙ্ক কমানো হয়। এতে পানি বেশি তাপমাত্রায় ফুটে এবং রান্না তারাতারি হয়ে যায়।