November 18, 2024 3:05 pm

সৌরজগত:

মহাকর্ষ শক্তির প্রভাবে আকৃষ্ট হয়ে নির্দিষ্ট সময়ে সূর্যের চারপাশে পরিভ্রমণ করছে কতগুলো গ্রহ, উপগ্রহ, নিহারিকা, ধুমকেতু, গ্রহাণুপুঞ্জ প্রভৃতি নামক কতগুলো মহাজাগতিক বস্তু। সূর্য এবং সূর্যের চারপাশে পরিভ্রমণকারি এ সকল মহাজাগতিক বস্তু নিয়েই তৈরি হয়েছে আমাদের সৌরজগত। সৌরজগতের কেন্দ্রে অবস্থান করছে সূর্য।

সূর্য:                                                                     

সৌরজগতের কেন্দ্রে অবস্থান করা সূর্য একটি মাঝারি আকারের নক্ষত্র। পৃথিবী সহ সৌরজগতের সকল গ্রহ, উপগ্রহ সূর্য থকেই আলো ও তাপ পেয়ে থাকে।

সূর্যের ভর : প্রায় ১.৯৯*১০৩০কিলোগ্রাম।
সূর্যের ব্যাস: প্রায় ১৩ লক্ষ ৮৪ হাজার কিলোমিটার।
পরিধি: ৪.৩৭৩*১০৬ কিমি।
মৌলিক গ্যাস: হাইড্রোজেন, হিলিয়াম ও অন্যান্য গ্যাস।
পৃষ্ঠদেশে তাপমাত্রা: ৬০০০ ডিগ্রী সেলসিয়াস।
কেন্দ্রভাগে তাপমাত্রা: প্রায় ১৫০,০০০,০০০ ডিগ্রী সেলসিয়াস।
আয়তনে পৃথীবির তুলনায়: ১৩ লক্ষ গুণ।
আয়তনে চাঁদের তুলনায়: ২ কোটি ৬০ লক্ষ গুণ বড়।
নিজ অক্ষের উপর একবার আবর্তন করতে সূর্যের সময় লাগে: ২৫ দিন।
প্রকৃত রং: সাদা।
সৌরজগতের গ্রহ সংখ্যা : ৮ টি।
সৌরজগতের উপগ্রহ সংখ্যা : ১৭৩ টি।
সূর্যগ্রহণ ঘটে: চাঁদ, সূর্য ও পৃথিবী একই সরলরেখায় অবস্থান করলে।
সূর্য থেকে পৃথিবীতে আলো আসতে সময় লাগে: ৮ মিনিট ২০ সেকেন্ড বা ৮.৩২ মিনিট।
সূর্যের নিকটতম গ্রহ: প্রক্সিমা সেন্টারাই।
দৃশ্যমান ঔজ্জল্য (ভি): -২৬.৮m
বর্ণালীভিত্তিক শ্রেণীবিন্যাস: জি২ভি
পরম মান: ৪.৮m
সূর্যের মধ্যে বেশি পরিমাণে রয়েছে: হাইড্রোজেন গ্যাস।
পৃথীবি থেকে গড় দুরত্ব: ৪৯.৬*১০৬          

সৌরকলঙ্ক:

সূর্যপৃষ্ঠের যে সকল স্থানের তাপমাত্রা পাশ্বব্রতী স্থানের তাপমাত্রা হতে কম সে স্থানগুলো পৃথীবি থেকে কালো দেখায়, এগুলোকে সৌরকলঙ্ক বলে।

সৌরঝড়:

সূর্যের কেন্দ্র থেকে প্লাজমা এবং চৌম্বকীয় তরঙ্গের বিস্ফোরণের ফলে বৈদ্যুতিক ও চৌম্বকীয় বিকিরণ ছিটকে বেরোতে থাকার ঘটনাকে সৌরঝড় বলে।

International Astronomical Union (IAU):

সংস্থাটি সৌরজগতের গ্রহের স্বীকৃতি দিয়ে থাকে। ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসট্রোনমিক্যল ইউনিয়ন ২৪ আগস্ট, ২০০৬ সালে প্লুটোর গ্রহের মর্যাদা বাতিল করে। IAU প্রতিষ্ঠা হয় ১৯১৯ সালে এবং সদর দপ্তর প্রাগ, চেক প্রজাতন্ত্র।

সৌরজগতের গ্রহ সমূহ:

সৌরজগতের চারপাশে নিয়মিত পরিভ্রমণ করছে বুধ, শুক্র, মঙ্গল, বৃহস্পতি, শনি, ইউরেনাস ও নেপচুন নামক আট টি গ্রহ। গ্রহগুলোর আর্ণনা নিন্মরুপ:

বুধ:

বুধ সৌরজগতের সবচেয়ে ক্ষুদ্র এবং সূর্যের নিকটতম একটি গ্রহ। সূর্য থেকে এর গর দুরত্ব ৫.৮ কোটি কিলোমিটার। এর ব্যাস ৪,৮৫০ কিলোমিটার। এখানে নেই কোন মেঘ, বৃষ্টি, বাতাস বা পানি এবং নেই কোন প্রাণের অস্তিত্ব। এর উপরিভাগ ঠিক চাঁদের মতো। ভু-ত্বক অসংখ্য গর্তে ভরা এবং এখানে রয়েছে অসংখ্য পাহাড় ও সমতল ভুমি। বুধ সূর্যকে একবার প্রদক্ষিণ করতে সময়  নেয় ৮৮ দিন। সুতরাং, এখানে ৮৮ দিনে এক বছর। বুধের কোন উপগ্রহ নেই।

শুক্র গ্রহ:

শুক্্র গ্রহ-ই ভোরের আকাশের শুকতারা এবং সন্ধ্যার আকাশের সন্ধ্যাতারা। দুরত্ব অনুযায়ী এটি সূর্যের দ্বিতীয় গ্রহ এবং সূর্য থেকে এর দুরত্ব ১০.৮ কোটি কিলোমিটার। শুক্্র গ্রহের ব্যাস ১২,১০৪ কিলোমিটার। এটি সূর্যের সবচেয়ে উজ্জল ও সবচেয়ে উত্তপ্ত গ্রহ। এর বায়ুমন্ডল প্রধানত কার্বন-ডাই-অক্সাইড দিয়ে তৈরি এবং এর আকাশে এসিড বৃষ্টি হয়। সূর্যকে একবার প্রদক্ষিণ করতে শুক্্র গ্রহের সময় লাগে ১২৫ দিন। সকল গ্রহই নিজ অক্ষের উপর পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে পাক খেলেও  শুক্্র-ই একমাত্র গ্রহ যেটি পূর্ব থেকে পশ্চিমে পাক খায়। এর কোন উপগ্রহ নেই।

পৃথিবী:

আমাদের বাসভুমি পৃথিবী সূর্যের তৃতীয় নিকটতম গ্রহ। সূর্য থেকে পৃথিবীর গড় দুরত্ব ১৫ কোটি কিলোমিটার এবং এর ব্যাস প্রায় ১২,৬৬৭ কিলোমিটার। সূর্যকে প্রদক্ষিণ করতে পৃথিবীর সময় লাগে ৩৬৫ দিন, ৫ ঘণ্টা, ৪৮ মিনিট, ৪৭ সেকেন্ড। চাঁদ পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহ। সৌরজগতের গ্রহগুলোর মধ্যে একমাত্র পৃথিবীতেই জীবন-ধারনের প্রয়োজনীয় পরিবেশ, অক্সিজেন, পানি, নাইট্রোজেন প্রভৃতি রয়েছে। তাই সৌরজগতের গ্রহগুলোর মধ্যে একমাত্র পৃথিবীতেই রয়েছে প্রাণের সঞ্চার।

মঙ্গল গ্রহ: 

মঙ্গল পৃথিবীর নিকটতম ও সূর্যের চতুর্থতম গ্রহ। খালি চোখে এ গ্রহকে লালচে দেখায়। সূর্য থেকে এর গড় দুরত্ব ২২.৮ কোটি কিলোমিটার এবং এর ব্যাস ৬,৭৮৭ কিলোমিটার। এই গ্রহের দিন-রাত্রির পরিমাণ প্রায় পৃথিবীর সমান। সূর্যের চারদিকে একবার প্রদক্ষিণ করতে মঙ্গলের সময় লাগে ৬৮৭ দিন। এর উপরিভাগে রয়েছে গিরিখাত ও আগ্নেয়গিরি। এ গ্রহে অল্প কিছু অক্সিজেন ও পানি রয়েছে এবং কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ প্রায় ৯৯ ভাগ। মঙ্গলের দুটি উপগ্রহ রয়েছে। এগুলোর নাম ফোবস এবং ডিমোস

বৃহস্পতি:

বৃহস্পতি সৌরজগতের সবচেয়ে বড় গ্রহ তাই একে গ্রহরাজ বলা হয়। সূর্য থেকে এর দুরত্ব প্রায় ৭৭.৮ কোটি কিলোমিটার এবং এর ব্যাস ১,৪২,৮০০ কিলোমিটার যা আয়তনে পৃথিবীর চেয়ে ১,৩০০ গুণ বড়।  বৃহস্পতি পৃথিবীর সাতাশ ভাগের এক ভাগ তাপ পায় এবং এর বায়ুমণ্ডলে রয়েছে হাইড্রোজেন ও হিলিয়াম গ্যাস। বৃহস্পতির উপরি ভাগের তাপমাত্রা খুবই কম এবং বীপরিত ভাবে অভ্যন্তরের তাপমাত্রা অত্যন্ত বেশি যা প্রায় ৩০,০০০ ডিগ্রী সেলসিয়াস। এ গ্রহে জীবের কোন অস্তিত্ব নেই। এর উপগ্রহ সংখ্যা ৬৭ টি এবং সূর্যকে একবার প্রদক্ষিণ করতে এর সময় লাগে ৪,৩৩১ দিন।

শনি:

আয়তনে শনি সৌরজগতের দ্বিতীয় বৃহত্তম গ্রহ এবং দুরত্ব অনুযায়ি সূর্যের ষষ্ঠতম। সূর্য থেকে এর দুরত্ব ১৪৩ কোটি কিলোমিটার এবং এর ব্যাস ১,২০,০০০ কিলোমিটার। এর ভুত্বক বরফে ঢাকা এবং এর বায়ুমণ্ডলে রয়েছে হাইড্রোজেন ও হিলিয়ামের মিশ্রন, মিথেন ও অ্যামোনিয়া গ্যাস। শনি গ্রহটি উজ্জল বলয় দ্বারা বেষ্টিত এবং এর উপগ্রহ সংখ্যা ৬২ টি। সূর্যকে একবার প্রদক্ষিণ করতে এর সময় লাগে পৃথিবীর প্রায় ২৯.৫ বছরের সমান।

ইউরেনাস :

আয়তনে ইউরেনাস সৌরজগতের তৃতীয় বৃহত্তম গ্রহ এবং দুরত্ব অনুযায়ী এটি সূর্যের সপ্তমতম গ্রহ। সূর্য থেকে ইউরেনাসের দুরত্ব ২৮৭ কোটি কিলোমিটার এবং এর ব্যাস ৪৯,০০০ কিলোমিটার। এ গ্রহটি মুলত হালকা পদার্থ দিয়ে গঠিত এবং আবহমণ্ডলে মিথেন গ্যাসের পরিমান অধিক। শনির মতো ইউরেনাসেরও কয়েকটি বলয় রয়েছে তবে বলয়গুলো শনির ন্যায় উজ্জল নয়। ইউরেনাসের উপগ্রহ সংখ্যা ২৭টি

নেপচুন:

নেপচুন সৌরজগতের সর্বশেষ বা অষ্টমতম গ্রহ। সূর্য থেকে এর দুরত্ব প্রায় ৪৫০ কোটি কিলোমিটার এবং এর ব্যাস ৪৮,০০০ কিলোমিটার। আয়তনে নেপচুন ৭২টি পৃথিবীর সমান এবং ভরের দিক থেকে ১৭টি পৃথিবীর ভরের সমান। এখানে সূর্যের আলো ও তাপ কম পৌছায়। এর উপগ্রহ সংখ্যা ১৪টি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *