October 18, 2024 5:40 am

মহাবিশ্ব ও আমাদের পৃথিবী:

পৃথীবি আমাদের বাসভুমি। পৃথিবীর চারদিকে ঘিরে রয়েছে অসিম অন্তহীন মহাকাশ। এ মহাকাশে রয়েছে চন্দ্র-সূর্যের ন্যায় অসংখ্য জ্যোতিষ্ক। আমাদের এই পৃথিবী- পৃথিবীতে বসবাসকারী ক্ষুদ্র পোকামাকড়, ধুলিকণা থেকে শুরু করে  চন্দ্র, সূর্য, গ্রহ, নক্ষত্র, ধুমকেতু, উল্কা নিহারিকা, কৃষ্ণবামন, কৃষ্ণসাগর প্রভৃতি লক্ষ লক্ষ কোটি কোটি মহাজাগতিক বস্তু নিয়েই আমাদের এই মহাবিশ্ব। এদের কারো নিজস্ব আলো রয়েছে আবার কারো নিজস্ব আলো নেই। এরা নিজস্ব কক্ষপথে সুশৃঙ্খল ভাবে ঘুরে বেড়ায়। মহাকাশ বা এই মহাশুন্যের কোন আদি-অন্ত বিজ্ঞানিরা আজোও খুজে পায়নি।

নক্ষত্র:

যেসব জ্যোতিষ্কের নিজস্ব আলো আছে তাদের নক্ষত্র বলে। মেঘমুক্ত রাতের আকাশে আমরা অনেক আলোক বিন্দুকে মিটমিট করে জ্বলতে দেখি এগুলো হলো মুলত নক্ষত্র। নক্ষত্রগুলো জলন্ত গ্যাসপিন্ড এবং এদের নিজস্ব আলো ও তাপ রয়েছে।

নক্ষত্রমন্ডলী:

নীহারিকা:

নিহারিকা হলো মহাকাশে অসংখ্য স্বল্পালোকিত তারকার আস্তরণ বা ধুলিকণা, হাইড্রোজেন গ্যাস, ও প্লাজমা দ্বারা গঠিত এক ধরনের আন্ত:নাক্ষত্রিক মেঘ ।

গ্যালাক্সি:

গ্যালাক্সি হল মাধ্যাকর্ষণ শক্তি দ্বারা আবদ্ধ মহাকাশে গ্রহ, নক্ষত্র, ধুমকেতু, ধুলিকণা, আন্তঃ নাক্ষত্রিক গ্যাস এবং অন্ধকার পদার্থের একটি সু-বিশাল সংগ্রহ । কোন একটি গ্যালাক্সির ক্ষুদ্র অংশকে ছায়াপথ বলে। গ্যালাক্সিগুলো বিভিন্ন আকৃতির হতে পারে তবে অধিকাংশ গ্যালাক্সি সর্পিলাকার বা উপবৃত্তাকার হয়ে থাকে। একটি গ্যালাক্সি বা ছায়াপথের মধ্যে দশ মিলিয়ন থেকে শুরু করে একশ ট্রিলিয়ন নক্ষত্র থাকতে পারে। আমাদের সৌরজগত মিল্কিওয়ে নামক ছায়াপথের মধ্যে অবস্থিত।

গ্যালাক্সির প্রকারভেদ:

গ্যালাক্সি বা ছায়াপথগুলিকে চার প্রকারে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়:

১. সর্পিল।                                                 ২. উপবৃত্তাকার।

৩. অনিয়মিত।                                           ৪. লেন্টিকুলার।

ছায়াপথ:

উল্কা:

ধুমকেতু:

গ্রহ:

উপগ্রহ:

সৌরজগত:

সূর্য: সৌরজগতের কেন্দ্রে অবস্থান করা সূর্য একটি মাঝারি আকারের নক্ষত্র। সূর্যের ব্যাস প্রায় ১৩ লক্ষ ৮৪ হাজার কিলোমিটার এবং এর ভর প্রায় ১.৯৯*১০১৩ কিলোগ্রাম। সূর্য সৌরজগতের একমাত্র নক্ষত্র এবং এর নিজস্ব আলো আছে। পৃথিবী সহ সৌরজগতের সকল গ্রহ, উপগ্রহ সূর্য থকেই আলো ও তাপ পেয়ে থাকে। সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘুরছে আটটি গ্রহ। গ্রহগুলো হলো: বুধ, শুক্র, পৃথিবী, মঙ্গল, বৃহস্পতি, শনি, ইউরেনাস এবং নেপচুন। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় গ্রহ হলো বৃহস্পতি এবং সবচেয়ে ছোট গ্রহ হলো বুধ।

বুধ: বুধ সৌরজগতের সবচেয়ে ক্ষুদ্র এবং সূর্যের নিকটতম একটি গ্রহ। সূর্য থেকে এর গর দুরত্ব ৫.৮ কোটি কিলোমিটার। এর ব্যাস ৪,৮৫০ কিলোমিটার। এখানে নেই কোন মেঘ, বৃষ্টি, বাতাস বা পানি এবং নেই কোন প্রাণের অস্তিত্ব। এর উপরিভাগ ঠিক চাঁদের মতো। ভু-ত্বক অসংখ্য গর্তে ভরা এবং এখানে রয়েছে অসংখ্য পাহাড় ও সমতল ভুমি। বুধ সূর্যকে একবার প্রদক্ষিণ করতে সময়  নেয় ৮৮ দিন। সুতরাং, এখানে ৮৮ দিনে এক বছর। বুধের কোন উপগ্রহ নেই।

শুক্্র গ্রহ: শুক্্র গ্রহ-ই ভোরের আকাশের শুকতারা এবং সন্ধ্যার আকাশের সন্ধ্যাতারা। দুরত্ব অনুযায়ী এটি সূর্যের দ্বিতীয় গ্রহ এবং সূর্য থেকে এর দুরত্ব ১০.৮ কোটি কিলোমিটার। শুক্্র গ্রহের ব্যাস ১২,১০৪ কিলোমিটার। এটি সূর্যের সবচেয়ে উজ্জল ও সবচেয়ে উত্তপ্ত গ্রহ। এর বায়ুমন্ডল প্রধানত কার্বন-ডাই-অক্সাইড দিয়ে তৈরি এবং এর আকাশে এসিড বৃষ্টি হয়। সূর্যকে একবার প্রদক্ষিণ করতে শুক্্র গ্রহের সময় লাগে ১২৫ দিন। সকল গ্রহই নিজ অক্ষের উপর পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে পাক খেলেও  শুক্্র-ই একমাত্র গ্রহ যেটি পূর্ব থেকে পশ্চিমে পাক খায়। এর কোন উপগ্রহ নেই।

 পৃথিবী: আমাদের বাসভুমি পৃথিবী সূর্যের তৃতীয় নিকটতম গ্রহ। সূর্য থেকে পৃথিবীর গড় দুরত্ব ১৫ কোটি কিলোমিটার এবং এর ব্যাস প্রায় ১২,৬৬৭ কিলোমিটার। সূর্যকে প্রদক্ষিণ করতে পৃথিবীর সময় লাগে ৩৬৫ দিন, ৫ ঘণ্টা, ৪৮ মিনিট, ৪৭ সেকেন্ড। চাঁদ পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহ। সৌরজগতের গ্রহগুলোর মধ্যে একমাত্র পৃথিবীতেই জীবন-ধারনের প্রয়োজনীয় পরিবেশ, অক্সিজেন, পানি, নাইট্রোজেন প্রভৃতি রয়েছে। তাই সৌরজগতের গ্রহগুলোর মধ্যে একমাত্র পৃথিবীতেই রয়েছে প্রাণের সঞ্চার।

মঙ্গল গ্রহ:  মঙ্গল পৃথিবীর নিকটতম ও সূর্যের চতুর্থতম গ্রহ। খালি চোখে এ গ্রহকে লালচে দেখায়। সূর্য থেকে এর গড় দুরত্ব ২২.৮ কোটি কিলোমিটার এবং এর ব্যাস ৬,৭৮৭ কিলোমিটার। এই গ্রহের দিন-রাত্রির পরিমাণ প্রায় পৃথিবীর সমান। সূর্যের চারদিকে একবার প্রদক্ষিণ করতে মঙ্গলের সময় লাগে ৬৮৭ দিন। এর উপরিভাগে রয়েছে গিরিখাত ও আগ্নেয়গিরি। এ গ্রহে অল্প কিছু অক্সিজেন ও পানি রয়েছে এবং কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ প্রায় ৯৯ ভাগ। মঙ্গলের দুটি উপগ্রহ রয়েছে। এগুলোর নাম ফোবস এবং ডিমোস।

বৃহস্পতি: বৃহস্পতি সৌরজগতের সবচেয়ে বড় গ্রহ তাই একে গ্রহরাজ বলা হয়। সূর্য থেকে এর দুরত্ব প্রায় ৭৭.৮ কোটি কিলোমিটার এবং এর ব্যাস ১,৪২,৮০০ কিলোমিটার যা আয়তনে পৃথিবীর চেয়ে ১,৩০০ গুণ বড়।  বৃহস্পতি পৃথিবীর সাতাশ ভাগের এক ভাগ তাপ পায় এবং এর বায়ুমণ্ডলে রয়েছে হাইড্রোজেন ও হিলিয়াম গ্যাস। বৃহস্পতির উপরি ভাগের তাপমাত্রা খুবই কম এবং বীপরিত ভাবে অভ্যন্তরের তাপমাত্রা অত্যন্ত বেশি যা প্রায় ৩০,০০০ ডিগ্রী সেলসিয়াস। এ গ্রহে জীবের কোন অস্তিত্ব নেই। এর উপগ্রহ সংখ্যা ৬৭ টি এবং সূর্যকে একবার প্রদক্ষিণ করতে এর সময় লাগে ৪,৩৩১ দিন।

শনি: আয়তনে শনি সৌরজগতের দ্বিতীয় বৃহত্তম গ্রহ এবং দুরত্ব অনুযায়ি সূর্যের ষষ্ঠতম। সূর্য থেকে এর দুরত্ব ১৪৩ কোটি কিলোমিটার এবং এর ব্যাস ১,২০,০০০ কিলোমিটার। এর ভুত্বক বরফে ঢাকা এবং এর বায়ুমণ্ডলে রয়েছে হাইড্রোজেন ও হিলিয়ামের মিশ্রন, মিথেন ও অ্যামোনিয়া গ্যাস। শনি গ্রহটি উজ্জল বলয় দ্বারা বেষ্টিত এবং এর উপগ্রহ সংখ্যা ৬২ টি। সূর্যকে একবার প্রদক্ষিণ করতে এর সময় লাগে পৃথিবীর প্রায় ২৯.৫ বছরের সমান।

ইউরেনাস : আয়তনে ইউরেনাস সৌরজগতের তৃতীয় বৃহত্তম গ্রহ এবং দুরত্ব অনুযায়ী এটি সূর্যের সপ্তমতম গ্রহ। সূর্য থেকে ইউরেনাসের দুরত্ব ২৮৭ কোটি কিলোমিটার এবং এর ব্যাস ৪৯,০০০ কিলোমিটার। এ গ্রহটি মুলত হালকা পদার্থ দিয়ে গঠিত এবং আবহমণ্ডলে মিথেন গ্যাসের পরিমান অধিক। শনির মতো ইউরেনাসেরও কয়েকটি বলয় রয়েছে তবে বলয়গুলো শনির ন্যায় উজ্জল নয়। ইউরেনাসের উপগ্রহ সংখ্যা ২৭টি।

নেপচুন: নেপচুন সৌরজগতের সর্বশেষ বা অষ্টমতম গ্রহ। সূর্য থেকে এর দুরত্ব প্রায় ৪৫০ কোটি কিলোমিটার এবং এর ব্যাস ৪৮,০০০ কিলোমিটার। আয়তনে নেপচুন ৭২টি পৃথিবীর সমান এবং ভরের দিক থেকে ১৭টি পৃথিবীর ভরের সমান। এখানে সূর্যের আলো ও তাপ কম পৌছায়। এর উপগ্রহ সংখ্যা ১৪টি।

বিষুবরেখা: দুই মেরু থেকে সমান দুরত্বে পৃধিবীর মাঝ বরাবর কল্পিত রেখাই হলো বিষুবরেখা।

বিষুবরেখার উত্তর অংশকে উত্তর গোলার্ধ এবং দক্ষিণ অংশকে দক্ষিণ গোলার্ধ বলে।

কর্কট ক্রান্তি রেখা: বিষুব রেখা হতে ২৩.৫ ডিগ্রী উত্তর অক্ষরেখাকে কর্কট ক্রান্তি রেখা এবং ২৩.৫ ডিগ্রী দক্ষিণ অক্ষরেখাকে মকর ক্রান্তি রেখা বলে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *