চর্যাপদ
বাংলা সাহিত্যের আদি নিদর্শন।
চর্যাপদ বাংলা সাহিত্যের প্রাচিন যুুুগের আদি ও একমাত্র নিদর্শন যা মূলত বৌদ্ধ সিদ্ধাচার্যদের রচিত সাধন সঙ্গিত। চর্যাপদে সহজিয়া পণ্ডিতগণ নিজেদের সাধনার অংশ হিসেবে; বৌদ্ধধর্মের গূঢ় সাধনাপ্রণালী ও দর্শনতত্ত্ব নানা প্রকার রুপকের মাধ্যমে আভাসে ইঙ্গিতে ব্যাক্ত করেছেন।
চর্যাপদের আবিস্কার:
চর্যাপদের আবিস্কর্তা কে?
চর্যাপদের আবিস্কর্তা হলেন মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রি। তিনি ১৯০৭ সালে নেপালের রাজগ্রন্থাগার থেকে পুঁথিটি আবিস্কার করেন। ১৯০৭ সালের আগে চর্যাপদ সম্পর্কে কোন তথ্যই জানা ছিল না।
১৮৮২ সালে রাজা রাজেন্দ্রলাল মিত্র ‘Sanskrit Buddhist Literature in Nepal’ গ্রন্থে প্রথম নেপালের বৌদ্ধতান্ত্রিক সাহিত্যের কথা তুলে ধরেন। এই গ্রন্থের বিবরণী থেকে উদ্দীপ্ত হয়ে এবং তৎকালীন বৃটিশ সরকার কর্তৃক আদিষ্ট হয়ে ১৯০৭ সালে মহামহোপাধ্যায় হরপ্রাসাদ শাস্ত্র্রি নেপালে তৃতীয় অনুসন্ধান সফর কালে নেপালের রাজগ্রন্থাগার থেকে চর্যাচর্যবিনিশ্চয়, সরহপাদ ও কৃষ্ণপাদের দোহা এবং ডাকার্ণব- এর পদগুলো আবিষ্কার করেন। তাঁর সম্পাদনায় ১৯১৬ সালে বঙ্গিয় সাহিত্য পরিষদ থেকে চারটি পুঁথি একত্রিত করে ’হাজার বছরের পুরাণ বাংলা ভাষায় বৌদ্ধগান ও দোহা’ নামে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়। এগুলোর মধ্যে একমাত্র ’চর্যাচর্যবিনিশ্চয়’ প্রাচীন বাংলায় লেখা অন্য তিনটি গ্রন্থ অপভ্রংশ ভাষায় রচিত।
চর্যাপদের রচনাকাল:
চর্যাপদ পাল আমলের সৃষ্টিকর্ম। পণ্ডিতগণ সঙ্গত কারনেই, চর্যাপদের রচনাকাল সম্পর্কে মতৈকে পৌছাতে না পারলেও ধরে নেওয়া হয় সপ্তম শতাব্দী হতে দশম/দ্বাদশ শতাব্দির মধ্যবর্তী সময়ে চর্যার পদগুলো রচিত হয়। চর্যাপদের রচনাকাল সম্পর্কে বিভিন্ন মণিষিদের মতবাদ নিম্নরুপ:
১. ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর মতে, চর্যাপদের রচনাকাল: ৬৫০ – ১২০০ খ্রিষ্টাব্দ।
২. ড. সুকুমার সেনের মতে, চর্যাপদের রচনাকাল: ৯০০ – ১৩৫০ খ্রিষ্টাব্দ।
৩. ড. সুতিতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের মতে, চর্যাপদের রচনাকাল: ৯৫০ – ১২০০ খ্রিষ্টাব্দ।
চর্যাপদের ভাষা: