কারক
কারক শব্দটির অর্থ- যা ক্রিয়া সম্পাদন করে। ক্রিয়া পদের সাথে নাম পদের সর্ম্পক-কে কারক বলে।
কারকের প্রকারভেদ:
কারক ছয় প্রকার:
কর্তৃকারক
কর্ম কারক
করণ কারক
অপাদান কারক
সম্প্রদান কারক
অধিকরণ কারক
কর্তৃকারক
যে বিশেষ্য বা সর্বনাম পদ ক্রিয়া সম্পাদন করে তাই ক্রিয়ার কর্তা। কর্তার সাথে ক্রিয়ার সর্ম্পককে কর্তৃকারক বলে।
ক্রিয়াকে ’কে’ বা ’কারা’ দ্বারা প্রশ্ন করলে যে উত্তর পাওয়া যায়, তা-ই কতৃকারক।
কর্তৃকারকের প্রকারভেদ:
ক্রিয়া সম্পাদনের বৈচিত্র ও বৈশিষ্ঠ অনুযায়ী কর্তা বা কর্তৃকারক চার প্রকার:
মুখ্য কর্তা:
যে কর্তা নিজেই ক্রিয়া সম্পন্ন করে তাকে মুখ্য কর্তা বলে।
প্রযোজক কর্তা: মূল কর্তা যখন কাউকে দিয়ে কোন কাজ করান বা করিয়ে নেন তখন তাকে প্রযোজক কর্তা বলে।
প্রযোজ্য কর্তা: মূল কর্তা যাকে দিয়ে ক্রিয়া সম্পন্ন করান তাকে বলে প্রযোজ্য কর্ত।
ব্যতিহার কর্তা : যখন দুজন কর্তা একই সময়ে একই কার্য সম্পন্ন করেন তখন তাদেরকে বলে ব্যতিহার কর্তা।
বাক্যের বাচ্য বা প্রকাশভঙ্গি অনুযায়ী কর্তা তিন প্রকার:
কর্মবাচ্যের কর্তা : কর্ম পদের প্রাধান্য পায়।
ভাববাচ্যের কর্তা: ক্রিয়া পদের প্রাধান্য পায়।
কর্ম-কর্তৃবাচ্যের কর্তা: বাক্যে কর্মপদই কর্তৃস্থানীয়।
কর্মকারক: যাকে আশ্রয় করে কর্তা ক্রিয়া সম্পাদন করে তাকে কর্মকারক বলে। কর্মপদ দুই প্রকার। যথা: মুখ্য কর্ম (বস্তু বাচক) ও গৌণ কর্ম (ব্যাক্তিবাচক)।
কর্মকারক
যাকে আশ্রয় করে কর্তা ক্রিয়া সম্পাদন করে তাকে কর্মপদ বলে আর কর্মপদের সাথে ক্রিয়ার সর্ম্পককে বলে কর্মকারক।
কর্মপদ দুই প্রকার। যথা: মুখ্য কর্ম (বস্তু বাচক) ও গৌণ কর্ম (ব্যাক্তিবাচক)। বাবা আমাকে (গৌণ কর্ম)একটি বই (মুখ্য কর্ম)উপহার দিল।
বিভিন্ন প্রকার কর্ম কারক:
সকর্মক ক্রিয়ার কর্ম: রুপকথা ফুল তুলছে।
প্রযোজক ক্রিয়ার কর্ম: মা শিশুকে চাঁদ দেখায়।
সমধাতুজ কর্ম: কঠিন এক দৌড় দৌড়াইলাম।
উদ্দেশ্য ও বিধেয়: দ্বিকর্মক ক্রিয়ার দুটি পরস্পর আপেক্ষিক কর্মপদ থাকলে প্রধান কর্মটিকে বলা হয় উদ্দেশ্য কর্ম এবং আপেক্ষিক কর্মটিকে বলা হয় বিধেয় কর্ম। যেমন: দুধকে (উদ্দেশ্য কর্ম) মোরা দুগ্ধ (বিধেয় কর্ম) বলি।
করণ কারক
করণ কারক: করণ শব্দের অর্থ উপকরণ, যন্ত্র, সহায় বা মাধ্যম। ক্রিয়া সম্পাদনের মাধ্যম, যন্ত্র বা সহায় হচ্ছে করণ কারক। ক্রিয়াকে ’কিসের দ্বারা’ বা ’ কি উপায়ো’ দ্বারা প্রশ্ন করলে যে উত্তর পাওয়া যায় তাই করণ কারক। যেমন: চোখ দিয়ে দেখি। কলম দিয়ে লিখি।
আরো উদাহরণ:
ছেলেরা বল খেলে।
চেষ্টায় সব হয়।
মন দিয়া বই পড়।
হাত দিয়ে খাই।
অপাদান কারক
যা থেকে কোন কিছু চ্যুত, বিচ্যুত বা জাত হয় এবং যাকে দেখে সবাই ভয় পায় তাই অপাদান কারক।
জাত অর্থে: জমি থেকে ফসল পাই। খেজুর রসে গুর হয়।
রক্ষিত অর্থে: বিপদে মোরে রক্ষা কর।
ভীত অর্থে: বাঘকে ভয় পায় না কে?
চ্যুত অর্থে : গাছ থেকে পাতা পড়ে। ছাদ হতে জল পড়ে।
গৃহীত অর্থে: ঝিনুকে মুক্তো মেলে।
দূরিভূত অর্থে : দেশ থেকে পঙ্গপাল চলে গেছে।
আরম্ভ: সোমবার থেকে পরীক্ষা শুরু।
সম্প্রদান কারক
সম্প্রদান কারক: যাকে স্বত্ব ত্যাগ করে নি:স্বার্থে কোন কিছু দান বা অর্চনা করা হয় তাই সম্প্রদান কারক। যেমন:
সৎপাত্রে কন্যা দান কর।
অন্ধজনে দেহ আলো।
ভিক্ষুককে ভিক্ষা দাও।
অধিকরণ কারক
স্থান, কাল বা ক্রিয়ার আধার হলো অধিকরণ কারক। অধিকরণ কারকে সপ্তমী বিভক্তি যুক্ত হয়। যেমন: প্রভাতে সূর্য ওঠে। পুকুরে মাছ আছে। আমি বাজারে যাই।
ভাবাধিকরণ:
কোন ক্রিয়াবাচক বিশেষ্য অন্য ক্রিয়ার কোনরূপ ভাবের অভিব্যক্তি প্রকাশ করে তখন তাকে ভাবাধিকরণ কারক বলে। যেমন – কান্নায় শোক দূরিভুত হয়। সূর্যোদয়ে অন্ধকার দূরিভুত হয়।
আধারাধিকরণ:
আধারাধিকরণ আবার তিন প্রকার।
১। ঐকদেশিক:
বিশাল কোন স্থানের কোন অংশে ক্রিয়া সংঘটিত হলে তাকে ঐকদেশিক আধারাধিকরণ বলে। যেমন: আকাশে চাঁদ উঠেছে। [আকাশের কোন অংশে]। বনে বাঘ আছে। [বনের কোন অংশে]
সামীপ্য অর্থেও ঐকদেশিক অধিকরণ কারক হয়। যেমন- দুয়ারে দাঁড়ায়ে প্রার্থী।[দুয়ারের কাছে]। ঘাটে নৌকা বাধা আছে।[ঘাটের কাছে]
২। অভিব্যপক:
উল্লেখিত বস্তু যদি সমগ্র অঞ্চলে বিরাজমান থাকে তাকে অভিব্যাপক আধারাধিকরণ বলে। যেমন- তিলে তৈল আছে। পুকুরে পানি আছে।
৩। বৈষয়িক:
কারও বিশেষ কোন বিষয়ে গুণ, দক্ষতা বা ক্ষমতা থাকলে সেখানে বৈষয়িক অধিকরণ হয়। যেমন: সুজন অঙ্কে কাঁচা। সে হারমোনিয়ামে ভালো।