আলো (Light):
আলো এক প্রকার অদৃশ্য শক্তি যা আমাদের দর্শনের অনুভূতি যোগায়। আলোর উৎস বা কোন বস্তু থেকে প্রতিফলিত হয়ে আলো আমাদের চোখে প্রবেশ করলে আমাদের দর্শনের অনুভূতি জন্মায়।
আলোর প্রকৃতি:
আলোর গতি প্রতি সেকেন্ডে ৩ লক্ষ কিলোমিটার বা ১,৮৬,০০০ মাইল/ সে. অতএব শূণ্য মাধ্যমে আলোর বেগ প্রতি সেকেন্ডে- ৩ * ১০৮ মিটার।
আলো শূন্য মাধ্যমে এক বৎসর সময় কালে যে দুরত্ব অতিক্রম করে তাকে- আলোক বর্ষ বলে। এক আলোক বর্ষ সমান ৯.৪৬১ * ১০১২ কিমি বা ৫.৮৭৯ * ১০১২ মাইল।
১ পারসেক= ৩.২ আলোক বর্ষ।
রঙিন টেলিভিশন হতে বের হয় ক্ষতিকারক রশ্মি- মৃদু রঞ্জন রশ্মি।
শরীরের ত্বকে ভিটামিন ডি তৈরিতে সাহায্য করে- অতিবেগুনি রশ্মি।
আলোক রশ্মির সর্বনিন্ম শক্তিসম্পন্ন কণিকাকে বল- ফোটন।
আলো সর্ম্পকিত বিভিন্ন তত্ত্ব:
কণাতত্ত্ব: কণাতত্ত্ব মতে আলো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণা আকারে নির্গত হয়। ১৬৭২ সালে আলোর কণাতত্ত্ব প্রদান করেন- বিজ্ঞানী স্যার আইজ্যাক নিউটন।
তরঙ্গ তত্ত্ব: তরঙ্গ তত্ত্ব মতে, আলো তরঙ্গ আকারে নির্গত হয়। ১৬৭৮ সালে আলোর তরঙ্গ তত্ত্ব প্রদান করেন- বিজ্ঞানী হাইগেন।
তাড়িত চৌম্বক তত্ত্ব: এই তত্ত্ব মতে, আলো তড়িৎ চৌম্বক তরঙ্গ হিসেবে নির্গত হয়। ১৮৬৪ সালে তড়িৎ চৌম্বক তরঙ্গ তত্ত্ব প্রদান করেন বিজ্ঞানী ম্যাক্সওয়েল।
কোয়ান্টাম তত্ত্ব:
এই তত্ত্বমতে, আলো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র গুচ্ছ আকারে নির্গত হয়। ১৯০০ সালে আলোর কোয়ান্টাম তত্ত্ব প্রদান করেন বিজ্ঞানি ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক। কোয়ান্টাম তত্ত্বের সাহায্যে, ১৯০৫ সালে বিজ্ঞানী আইনস্টাইন আলোর ফটোতড়িৎ ক্রিয়া ব্যাখ্যা করেন এবং এজন্য তিনি ১৯২১ সালে পদার্থ বিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পান।
তাড়িত চৌম্বক বর্ণালী:
শূন্য মাধ্যমে সব তাড়িত চৌম্বক তরঙ্গের বেগ সমান হলেও তরঙ্গ দৈর্ঘ বা কম্পাঙ্ক বিভিন্ন। আলোর তরঙ্গের দৈর্ঘ অ্যাংস্ট্রম এককে পরিমাপ করা হয়। তাড়িত চৌম্বক বিকিরণ তরঙ্গগুলোর দৈর্ঘ্য বা কম্পাঙ্কের ভিত্তিতে এগুলোকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে, এগুলোকে তাড়িত চৌম্বক বর্ণালী বলা হয়।
সবচেয়ে ক্ষুদ্র তরঙ্গদৈর্ঘ্যের বিকিরণ- গামা রশ্মি।
সর্ববৃহৎ তরঙ্গদৈর্ঘের বিকিরণ- বেতার তরঙ্গ।
তাড়িত চৌম্বক তরঙ্গগুলোর তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের ক্রম:
গামা রশ্মি < রঞ্জন রশ্মি (X- Ray) < অতিবেগুনি রশ্মি (Ultraviolet- Ray) < দৃশ্যমান আলো (Visible Light) < অবলোহিত রশ্মি (Infrared- Ray) < মাইক্রোওয়েভ (Micro-wave) < বেতার তরঙ্গ (Radio wave).
তাড়িৎ চৌম্বক তরঙ্গ | তরঙ্গদৈর্ঘ্য |
গামা রশ্মি | 10-11m চেয়ে ছোট |
এক্সরে | 10-11m থেকে 10-8m |
অতিবেগুনি রশ্মি | 10-9m থেকে 3.5 * 10-7m |
দৃশ্যমান আলো | 4 * 10-7m থেকে 7 *10-7m |
অবলোহিত রশ্মি | 10-6m থেকে 10-3m |
বেতার তরঙ্গ | 10-4m থেকে 5 * 104m |
তারিত চৌম্বক তরঙ্গগুলোর কম্পাঙ্কের ক্রম:
যে তাড়িৎ চৌম্বক তরঙ্গের দৈর্ঘ্য যত কম তার কম্পাঙ্ক তত বেশি। বেতার তরঙ্গের কম্পাঙ্ক সবচেয়ে কম এবং গামা রশ্মির কম্পাঙ্ক সবচেয়ে বেশি। কম্পাঙ্কের ক্রম:
গামা রশ্মি > এক্সরে রশ্মি > অতিবেগুনি রশ্মি > দৃশ্যমান আলো > অবলোহিত রশ্মি > বেতার তরঙ্গ।
গুরুত্বপূর্ণ তথ্য:
পারমাণবিক বিস্ফোরণের ফলে উৎপন্ন হয়- তেজস্ক্রিয় গামা রশ্মি।
সূর্যথেকে বিকীর্ণ যে তাপ নির্গত হয়- অবলোহিত রশ্মি।
কোন কোন ধাতুর উপর আলো পরলে তাৎক্ষনিক ইলেকট্রন নির্গত হয় একে বলে- ফটো তড়িৎ ক্রিয়া।
রাডার যন্ত্রে ব্যবহার করা হয়- মাইক্রোওয়েভ তরাঙ্গ।
রিমোট কন্ট্রোলে সংকেত প্রেরণ করা হয়- ইনফ্রারেড বা অবলোহিত রশ্মির মাধ্যমে।
ফটোগ্রাফিক ফিল্মে ব্যবহার করা হয়- দৃশ্যমান আলো।
ক্যান্সার রোগে ব্যবহার করা হয়- গামা রশ্মি।
শরীরের ভেতরের অঙ্গ-পতঙ্গের ছবি তুলতে বা হীরক শনাক্তের কাজে ব্যবহার করা হয়- X-ray বা রঞ্জন রশ্মি।
দৃশ্যমান আলো (Visible Light):
400 থেকে 700 ন্যনোমিটার তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের তাড়িত চৌম্বক বিকিরণ মানুষের চোখে দৃশ্যমান- এগুলো দৃশ্যমান আলো। যে বর্ণের আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য যত বেশি, তার বিচ্যুতি, প্রতিসরণ ও বিক্ষেপণ তত কম। যেমন: লাল আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য সবচেয়ে বেশি কিন্তু তার প্রতিসরণ, বিচ্যুতি ও বিক্ষেপণ সবচেয়ে কম। আবার, বেগুনি রঙ্গের তরঙ্গদৈর্ঘ্য সবচেয়ে কম কিন্তু তার প্রতিসরণ, বিচ্যুতি ও বিক্ষেপণ সবচেয়ে বেশি।
দৃশ্যমান আলোর তরাঙ্গদৈর্ঘ্যের ক্রম:
বেনীআসহকলা: বেগুনি (৩৮০-৪৫০nm) < নীল (৪৫০-৪৮০nm) < আসমানী (৪৮০-৫০০nm) < সবুজ (৫০০-৫৫০nm) < হলুদ (৫৫০-৫৯০nm) < কমলা (৫৯০-৬৪০nm) < লাল (৬৪০-৭৮০nm)।
লাল আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য সবচেয়ে বেশি হওয়ায়- লাল আলো অনেকদুর থেকে দেখা যায়। তাই বিপদ সংকেতে লাল আলো ব্যবহার করা হয়। তাছাড়া লাল আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য বেশি হওয়ায় সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের সময় সূর্যকে লাল দেখায়।
আলোর প্রতিসরণ:
আলো যখন তির্যকভাবে ঘন মাধ্যম হতে হালকা বা হালকা হতে ঘন মাধ্যমে প্রবেশ করে তখন বিভেদ তলে আলোক রশ্মি কিছুটা দিক পরিবর্তন করে- একে আলোর প্রতিসরণ বলে।
আলোক রশ্মি হালকা মাধ্যম হতে ঘনমাধ্যমে প্রবেশ করলে বিভেদতলে অভিলম্বের কিছুটা কাছে চলে আসে এবং আলোক রশ্মি ঘন হতে হালকা মাধ্যমে প্রবেশ করলে অভিলম্ব থেকে দুরে সরে যায়।
ক্রান্তিকোণ:
আলোক রশ্মির আপতন কোণের যে মাণের কারণে প্রতিসরণ কোণের মান ৯০০ হয় বা প্রতিসরিত রশ্মি বিভেদ তল বরাবর চলে যায়, সেক্ষেত্রে আপতন কোণকে ক্রান্তিকোণ বলে।
পূর্ণ অভ্যন্তরীণ প্রতিফলন:
আলোক রশ্মি ঘন মাধ্যম হতে হালকা মাধ্যমে প্রবেশের সময় আপতন কোণের মান সংকট কোণের চেয়ে বড় হলে আলোক রশ্মি প্রতিসরিত না হয়ে বিভেদ তল থেকে একই মাধ্যমে প্রতিফলিত হয়ে আসে। এই ঘটনাকে পূর্ণ অভ্যন্তরীণ প্রতিফলন বা Total Internal Reflection বলে। এক্ষেত্রে বিভেদ তল প্রতিফলক হিসেবে কাজ করে এবং এই প্রতিফলন সাধারণ প্রতিফলনের নিয়মানুসারে হয়।
গুরুত্বপূণ্য তথ্য:
- পূণ্য অভ্যন্তরীণ প্রতিফলনের কারনে হীরা চকচক করে।
- মরুভূমিতে মরীচিকার সৃষ্টি হয়।
- প্রখর রোদে পিচঢালা রাস্তা ভেজা ও চকচকে দেখায়।
- তথ্য ও যোগাযোগের জন্য অপটিক্যাল ফাইবারে আলোর পূর্ণ্য অভ্যন্তরীণ প্রতিফলন ব্যবহার করা হয়।
- পদ্ম পাতায় বৃষ্টির ফোটা পড়লে চকচক করে।