বাংলাদেশের অবস্থান
বাংলাদেশ এশিয়া মহাদেশের দক্ষিণাংশে অবস্থিত একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র। এ দেশ ২০ ডিগ্রী ৩৪ ইঞ্চি উত্তর অক্ষরেখা থেকে ২৬ ডিগ্রী ৩৮ ইঞ্চি উত্তর অক্ষরেখা এবং ৮৮ ডিগ্রী ০১ ইঞ্চি পূর্ব দ্রাঘিমারেখা থেকে ৯২ ডিগ্রী ৪১ ইঞ্চি পূর্ব দ্রাঘিমারেখার মধ্যে অবস্থিত। বাংলাদেশের মাঝামাঝি স্থান দিয়ে অতিক্রম করেছে কর্কটক্রান্তি রেখা।
বাংলাদেশের আয়তন
বাংলাদেশের আয়তন ১,৪৭,৫৭০ বর্গ কিলোমিটার। ২০১৫ সালের ৩১ জুলাই বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে স্বাক্ষরিত স্থল সীমানা চুক্তি অনুযায়ী ছিটমহল বিনিময়ের মাধ্যমে বাংলাদেশের মোট ভুখন্ডের সাথে ২৮৪৬৭ বর্গ কিলোমিটার এবং মিয়ানমার থেকে প্রাপ্ত ৭০০০০ বর্গ কিলোমিটার জমি যোগ হয়েছে। সে হিসেবে বাংলাদেশের আয়তন হওয়ার কথা ২৪৬০৩৭ বর্গকিলোমিটার। কিন্তু এ তথ্যটি সরকারীভবে ঘোষণা করা হয় নি। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ১৯৯৬-৯৭ সালের তথ্য অনুসারে নদী অঞ্চলের আয়তন ৯,৪০৫ বর্গ কিলোমিটার ও বনাঞ্চলের আয়তন ২১,৬৫৭ বর্গকিলোমিটার। বাংলাদেশের টেরিটোরিয়াল সমুদ্রসীমা ১২ নটিক্যাল মাইল এবং অর্থনৈতিক সমুদ্রসীমা ২০০ নটিক্যাল মাইল। সামুুদ্রিক মালিকানা মহীসোপানের শেষ সীমানা পর্যন্ত।
বাংলাদেশের সীমা
বাংলাদেশের উত্তরে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, মেঘালয় ও আসাম রাজ্য; পূর্বে আসাম, ত্রিপুরা, মিজোরাম রাজ্য ও মিয়ানমার এবং পশ্চিমে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য অবস্থিত। বাংলাদেশের মোট সীমারেখা ৪,৭১১ কিলোমিটার। এর মধ্যে ভারতের সাথে সীমারেখা ৩,৭১৫ কিলোমিটার এবং মিয়ানমারের সাথে সীমারেখার দৈর্ঘ ২৮০ কিলোমিটার। বাংলাদেশের দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের তটরেখার দৈর্ঘ ৭১৬ কিলোমিটার। বাংলাদেশের দক্ষিণ- পূর্বে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমানার মধ্যে অবস্থিত নাফ নদী এবং দক্ষিণ-পশ্চিমে বাংলাদেশ-ভারত সীমানার মধ্যে অবস্থিত হাড়িয়াভাঙ্গা নদী।
সীমান্তবর্তী স্থান, জেলা, উপজেলা:
১। পূর্ব -পশ্চিমে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বিস্তৃতি- ৪৪০ কিলোমিটার।
২। বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিম থেকে দক্ষিণ-পূর্ব প্রান্ত পর্যন্ত সর্বোচ্চ বিস্তৃতি- ৭৬০ কিলোমিটার।
৩। ঢাকার প্রতিপাদ স্থান- চিলির নিকট প্রশান্ত মহাসাগরে।
৪। বাংলাদেশের সর্ব উত্তরের জেলা- পঞ্চগড়।
৫। বাংলাদেশের সর্ব উত্তরের উপজেলা- তেতুলিয়া।
৬। বাংলাদেশের সর্ব উত্তরের স্থান- জায়গীরজোত/ বাংলাবান্ধা।
৭। বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণের জেলা- কক্সবাজার।
৮। বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণের উপজেলা- টেকনাফ।
৯। বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণের স্থান- ছেঁড়াদ্বীপ/ সেন্টমার্টিন দ্বীপ।
১০। সেন্টমার্টিনের স্থানীয় নাম নারিকেল জিঞ্জিরা।
১১। বাংলাদেশের সর্বদক্ষিণের ইউনিয়ন- সেন্টমার্টিন।
১২। বাংলাদেশের সর্ব-পূর্বের গ্রাম/ স্থান- আখাইনঠং।
১৩। বাংলাদেশর সর্ব পূর্বের উপজেলা- থানচি
১৪। বাংলাদেশের সর্ব পূর্বের জেলা- বান্দরবান।
১৫। বাংলাদেশের সর্ব পশ্চিমের গ্রাম- মনাকষা
১৬। বাংলাদেশের সর্ব পশ্চিমের উপজেলা- শিবগঞ্জ
১৭। বাংলাদেশের সর্ব পশ্চিমের জেলা- চাঁপাইনবাবগঞ্জ।
১৮। সর্ব পশ্চিমের বিভাগ- রাজশাহী
১৯। সর্ব পূর্বের বিভাগ- চট্টগ্রাম
২০। সর্ব উত্তরের বিভাগ- রংপুর
২১। সর্ব দক্ষিণের বিভাগ- চট্টগ্রাম
২২। বাংলাদেশের সর্ব উত্তর-পূর্বের উপজেলা- জকিগঞ্জ।
২৩। সর্ব উত্তর-পূর্বের জেলা- সিলেট
২৪। সর্ব উত্তর-পূর্বের বিভাগ- সিলেট
২৫। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বের উপজেলা- টেকনাফ
২৬। বাংলাদেশের দক্ষিণ- পূর্বের জেলা- কক্সবাজার
২৭। বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণ- পশ্চিমের উপজেলা- শ্যামনগর
২৮। সর্ব দক্ষিণ-পশ্চিমের জেলা- সাতক্ষিরা
২৯। বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণ- পশ্চিমের বিভাগ- খুলনা
৩০। বাংলাদেশর সর্ব দক্ষিণ- পূর্ব বিভাগের নাম- চট্টগ্রাম।
৩১। বাংলাদেশের দ্বীপ জেলা- ভোলা।
৩২। বাংলাদেশের বৃহত্তম ব-দ্বীপ- সুন্দরবন।
৩৩। বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ দ্বীপ- ভোলা
৩৪। বাংলাদেশের একমাত্র পাহাড়ি দ্বীপ- মহেশখালী
৩৫। বাংলাদেশের সর্বনিম্ন বৃষ্টিপাত হয়- নাটোরের লালপুর।
৩৬। বাংলাদেশের উষ্ণতম স্থান- নাটোরের লালপুর
বাংলাদেশের ভূপ্রকৃতি
বাংলাদেশ পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ ব-দ্বীপ। উত্তর-পূর্ব দিক থেকে বয়ে চলেছে পদ্মা, মেঘনা, যমুনার মতো প্রায় ৭০০ নদী। বাংলাদেশের প্রায় সমগ্র অঞ্চল এক বিস্তীর্ণ সমভুমি এবং সামান্য পরিমানে উচ্চভুমি রয়েছে।
বাংলাদেশের ভুপ্রকৃতিকে তিনটি শ্রেণীতে ভাগ করা হয়েছে।
ক। টারশিয়ারি যুগের পাহাড় সমূহ।
খ। প্লাইস্টোসিনকালের সোপানসমূহ।
গ। সাম্প্রতিককালের প্লাবন সমভুমি।
ক। টারশিয়ারি যুগের পাহাড়সমূহ:
বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব, উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের পাহাড়সমূহ এ অঞ্চলের অর্ন্তভুক্ত। টারশিয়ারি যুগে হিমালয় পর্বত উত্থিত হওয়ার সময় এ পাহাড়গুলো সৃষ্টি হয়েছে বিধায় এগুলো টারশিয়ারি যুগের পাহাড় নামে পরিচিত। এ পাহাড়গুলো আসমের লুসাই পাহাড় ও মিয়ানমারের আরাকান পাহাড়ের সমগোত্রিয়। এ পাহাড়গুলো বেলেপাথর, শেল ও কর্দম দ্বারা গঠিত। এ অঞ্চলের পাহাড়গুলোকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
১. দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের পাহাড়সমূহ:
রাঙামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম জেলার পূর্বাংশ এ অঞ্চলের অর্ন্তভুক্ত। দক্ষিণ-পূর্বেও এ পাহাড়গুলোর গড় উচ্চতা ৬১০ মিটার। বাংলাদেশের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ তাজিনডং (বিজয়) যার উচ্চতা ১,২৩১ মিটার এই অঞ্চলে অবস্থিত। বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ শৃঙ্গ কেওক্রাডং যার উচ্চতা ১,২৩১ মিটার এ অঞ্চলের দক্ষিণ-পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত।
২. উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের পাহাড়সমূহ:
ময়মনসিংহ ও নেত্রকোনা জেলার উত্তরাংশ, সিলেট জেলার উত্তর ও উত্তর ও উত্তর-পূর্বাংশ এবং মৌলভিবাজার ও হবিগঞ্জ জেলার দক্ষিণের পাহাড়গুলো এ অঞ্চলের অর্ন্তভুক্ত। এই পাহাড়গুলোর গড় উচ্চতা ২২৪ মিটর। উত্তরের পাহাড়গুলোর উচ্চতা ৩০-৯০ মিটারের মধ্যে এবং স্থানীয়ভাবে এগুলো টিলা নামে পরিচিত।
খ। প্লাইস্টোসিনকালের সোপানসমূহ:
আনুমানিক ২৫,০০০ বছর পূর্বের সময়কালকে প্লাইস্টোসিনকাল বলে। প্লাইস্টোসিনকালে গঠিত উত্তর-পশ্চিমাংশের বরেন্দ্রভুমি, মধ্যভাগের মধুপুর ও ভাওয়ালের গড় এবং কুমিল্লার লালমাই পাহাড় এ অঞ্চলের অর্ন্তভুক্ত।
1. বরেন্দ্রভুািম:
রাজশাহী ও দিনাজপুর জেলার কিছু অংশ নিয়ে বরেন্দ্রভূমি গঠিত। এর আয়তন প্রায় ৯,৩২০ বর্গকিলোমিটার এবং প্লাবন সমভুমি থেকে এর উচ্চতা ৬ থেকে ১২ মিটার। এ অঞ্চলের মাটি ধূসর ও লাল বর্ণের।
2. মধুপুর ও ভাওয়ালের গড়:
টাঙ্গাইল ও ময়মনসিংহ জেলার মধুপুর এবং গাজীপুর জেলার ভাওয়ালের গড় এ অঞ্চলের অর্ন্তগত। এর আয়তন প্রায় ৪,১০৩ বর্গ কিলোমিটার। সমতল ভুমি থেকে এর উচ্চতা প্রায় ৩০ মিটার। মাটির রং লালচে ও ধুসর।
3. লালমাই পাহাড়:
কুমিল্লা শহর থেকে ৮ কিলোমিটার পশ্চিমে লালমাই থেকে ময়নামতি পর্যন্ত এ পাহাড়টি অবস্থিত। এর আয়তন প্রায় ৩৪ বর্গকিলোমিটার এবং গড় উচ্চতা ২১ মিটার।
গ। সাম্প্রতিক কালের প্লাবন সমভূমি:
ক) রংপুর ও দিনাজপুরের পাদদেশীয় সমভূমি।
খ) ঢাকা, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, জামালপুর, পাবনা, কুমিল্লা, নোয়াখালী ও সিলেটের অর্ন্তগত প্লাবন সমভূমি।
গ) ফরিদপুর, খুলনা, যশেরা, কুষ্টিয়ার অংশবিশেষ নিয়ে ব-দ্বীপ সমভূমি।
ঘ) নোয়াখালি ও ফেনী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত চট্টগ্রামের উপকূলীয় সমভূমি।
ঙ) খুলনা ও পটুয়াখালী ও বরগুনার স্রোতজ সমভূমি।